নির্বাচন নয়, জাতীয় সরকার? পর্দার আড়ালে কী খেলা চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে?
ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনা, বিএনপির অনীহা—নির্বাচন নিয়ে দোলাচলে দেশ


এবিএনএ:
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে, ঠিক তখনই রাজনীতির অন্তরাল থেকে ভেসে আসছে এক নতুন পরিকল্পনার গুঞ্জন—একটি জাতীয় সরকার গঠনের নীলনকশা। নির্বাচন নয়, বরং একটি অন্তর্র্বর্তী সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রেখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে বলে একাধিক সূত্রের দাবি।
জাতীয় ঐকমত্য গঠনের নামে একের পর এক বৈঠক হলেও স্পষ্ট কোনো নির্বাচনী সময়সূচি এখনো সামনে আসেনি। বরং সংস্কার, বিচার ও সংলাপ—এই শব্দগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক পরিসরে। এতে করে নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সে নিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষের সন্দেহ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠের বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। বিএনপি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে ভবিষ্যতে নির্বাচন হবে না বলেই তারা মনে করে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একে রাষ্ট্রীয় সংকট হিসেবেই দেখছেন।
তবে সরকারের দিক থেকে এখনো তেমন কোনো কার্যকর প্রস্তুতি বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত। এই সুযোগেই পর্দার আড়ালে চলছে জাতীয় সরকার গঠনের নানা তৎপরতা। বিভিন্ন মহল, এমনকি কিছু বিদেশি দূতাবাসও এ প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণে একটি নতুন কাঠামোর প্রস্তাব সামনে এসেছে, যেখানে জাতীয় সরকার গঠন করে তিন বছর পরে নির্বাচন করার চিন্তা করা হচ্ছে। তারা বলছে, আগে সংস্কার চূড়ান্ত করতে হবে, তারপর গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে তবেই নির্বাচন হবে।
জাতীয় সরকারের মূল প্রস্তাবনায় রয়েছে—ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতি হবেন এবং বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন পক্ষকে অংশীদার করে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হবে। বিএনপি অবশ্য এ প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা মনে করে, এটি অন্তর্র্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় থাকার অপকৌশল।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০ মাসের অন্তর্র্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকারে অংশ নেবে না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “অবিলম্বে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি বরাবরই নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা চায়, অন্তত তিন বছর পর নির্বাচন হোক। ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতি হলে তাদের মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সহজ হবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্কও এখনো শীতল। বঙ্গভবনের শিষ্টাচারিক রীতিনীতি তিনি উপেক্ষা করেছেন বারবার। এমনকি ঈদেও রাষ্ট্রপতির পাশে নামাজ পড়তে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এখন মূলত পর্দার আড়ালে। জনগণের প্রত্যাশা ও মতামত অনেকটাই উপেক্ষিত। বিএনপি যদি শক্তিশালী জনমত গঠন করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে না নামতে পারে, তাহলে হয়তো জাতীয় সরকারের বিকল্প বাস্তবতা সামনে চলে আসবে।
এখন মূল প্রশ্ন—নির্বাচন হবে, না কি গঠিত হবে একটি আপাত রাজনৈতিক ঐকমত্যভিত্তিক জাতীয় সরকার? এ উত্তর মিলছে না রাজপথে, বরং খোঁজ চলছে কূটনৈতিক মহল ও ড্রইং রুমে।
Share this content: