আন্তর্জাতিক

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নয়, সংলাপ ও অংশগ্রহণেই ফিরবে গণতন্ত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ বলছে, দল নিষিদ্ধ নয় বরং রাজনৈতিক সম্প্রীতির মাধ্যমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব

এবিএনএ: ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি এক বিশ্লেষণে বলেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে নয়, বরং রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে খুঁজে নেওয়া উচিত।

এই নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস সামরিক হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও গণতন্ত্রের ঘাটতিতে ভরা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মাত্র চার বছর পরই সামরিক শাসনের সূচনা ঘটে এবং আজও সেই ছায়া বিদ্যমান। বর্তমান সময়েও, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখনও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অধরা।

নতুন সরকার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু করে। তারা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে এবং অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, আন্তর্জাতিক ঋণপ্রদান আবার শুরু হয়েছে। তবে চীনমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। এতে ভারত একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে এবং রাজনৈতিকভাবে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, মে মাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, দুর্নীতির অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচারের আওতায় আনা যৌক্তিক হলেও, পুরো দলকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। এমন সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে ও বাইরে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং একটি বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা প্রশ্নবিদ্ধ।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয় বরং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রই হতে পারে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি। আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাই সময়ের দাবি।

এই বিশ্লেষণ আরও বলছে, আওয়ামী লীগের জয় এখন নিশ্চিত নয়, তবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে তাদের সংসদে উপস্থিতি সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুসংহত করবে। গণতন্ত্রের পথে ফিরে যেতে হলে পুনর্মিলন ও সহনশীলতাই হতে হবে বাংলাদেশের মূল রাজনৈতিক দর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button