ডেঙ্গুর দাপটে হাসপাতাল ভরছে, জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনে ভর্তি ১১৬০ জন
ডেঙ্গুর প্রকোপে দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি, একদিনে আরও একজনের মৃত্যু, চীন দিয়েছে ১৯ হাজার শনাক্তকরণ কিট


এবিএনএ: সারা দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত তিন দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৮ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার একদিনেই ভর্তি হয়েছিলেন ৪১৬ জন, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ একদিনে ভর্তি। ফলে জুলাই মাসের প্রথম তিন দিনেই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬০ জনে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪৫৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের।
সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে—১৫০ জন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ভর্তি ৭৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগে যথাক্রমে ঢাকা বিভাগে ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ৩২ জন, রাজশাহীতে ২৯ জন, খুলনায় ১৪ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন এবং সিলেটে ২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩২৯ জন।
চীন দিল ১৯ হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট
ডেঙ্গু শনাক্তকরণে সহায়তার অংশ হিসেবে চীন সরকার বাংলাদেশকে ১৯ হাজার ‘কম্বো কিট’ দিয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে একসঙ্গে এনএস-১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করা যাবে। বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাখালী কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কিট হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, ডেঙ্গুর হটস্পট এলাকায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, অ্যাম্বুলেন্স ও ডায়াগনস্টিক কিট পাঠানো হবে।
তার দাবি, “পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে অনেকে জটিলতায় পড়ছেন।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ চারটি ভাইরাস সক্রিয়। সাধারণ জ্বর ভেবে রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, যা চিকিৎসা জটিল করছে।
অতীত রেকর্ড ভেঙে নতুন আশঙ্কা?
২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন এবং মারা গিয়েছিলেন ৫৭৫ জন। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০২৩ সাল, যেখানে আক্রান্ত হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২০২২ সালেও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজারের বেশি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এ বছরও ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই জনসাধারণকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাসাবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর ‘ভেক্টর কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ আরও জোরদার করা হবে এবং স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।