আন্তর্জাতিক

গাজায় ত্রাণের ট্রাক লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা, প্রাণ গেল পাঁচজনের

দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ নিতে আসা জনগণের ওপর ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, নারী ও শিশুসহ আহত অন্তত ৫০, ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না উত্তর অংশে

এবিএনএ: 

দক্ষিণ গাজার আল মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ নিতে আসা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর শনিবার ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী যদিও গাজার কিছু এলাকায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তবে উত্তর গাজায় এখনও একরকম অবরুদ্ধ অবস্থাই বজায় আছে। সেখানে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। গাজার বাসিন্দা আহমেদ আল নাজ্জার বলেন, “দক্ষিণে কিছু ট্রাক ঢুকেছে, তবে আমাদের বহু পরিবার এখনও একটি বিস্কুট পর্যন্ত পায়নি।”

শনিবার পর্যন্ত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৯০০ ছাড়িয়েছে, আর আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৫০০-এর বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ হতাহতই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত দুই দিনে তারা গাজায় ১০০-র বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭০ জন ফিলিস্তিনি। গাজা সিটির তুফা এলাকায় ভোররাতে বোমা বর্ষণে প্রাণ যায় চারজনের। এর পাশাপাশি, মধ্য গাজার দায়ের আল বালাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনারা স্থল অভিযান শুরু করেছে।

৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও উত্তর গাজা রয়ে গেছে বঞ্চিত

গাজার চিকিৎসা বিভাগের প্রধান জানান, গত তিন দিনে মোট ৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও, সেগুলো শুধুমাত্র দক্ষিণ অংশেই গেছে। উত্তর গাজায় এখনো কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আংশিক ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা গাজার সার্বিক সংকটকে খুব একটা লাঘব করছে না।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবঢাল ব্যবহার করার অভিযোগ

ফিলিস্তিনের এক বাসিন্দা মাসুদ আবু সাইদ জানান, তাকে খান ইউনিস এলাকায় জোর করে দুই সপ্তাহ ধরে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। “আমাকে জোর করে হামাসের টানেল খুঁজে বের করতে বাধ্য করা হয়েছিল,” বলেন মাসুদ। তিনি বলেন, “আমার শিশু সন্তানের কাছে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি।”

জাতিসংঘের আহ্বান: ত্রাণ আরও বাড়াতে হবে

গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ অনেক কম। তারা দ্রুত ও ব্যাপক হারে ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় ইসরায়েলের এই আচরণকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এখন বড় প্রশ্ন: এই সংঘাত কতদিন চলবে এবং কত প্রাণ আরও ঝরবে?

Share this content:

Back to top button