রাজবাড়ীতে কবর ভাঙচুর ও লাশ পোড়ানো: মানবজাতির মর্যাদায় অমানবিক আঘাত
নুরাল পাগলার কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি সভ্য সমাজে অচিন্তনীয় বর্বরতা।


এবিএনএ: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার কবর ভেঙে লাশ উত্তোলন ও পরে পোড়ানোর ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং মানবজাতির মর্যাদার ওপর ভয়াবহ আঘাত। সভ্য সমাজে এমন অমানবিক বর্বরতা অকল্পনীয়।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার জুমার নামাজের পর। স্থানীয়রা নুরাল পাগলার কবর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। কবরটি কাবা শরিফের আদলে নির্মাণ এবং ভেতরে বিশেষভাবে মরদেহ দাফন করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সমাবেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে নুরাল পাগলার বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলা চালায়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, ভক্তদের মারধর এবং ব্যাপক ভাঙচুরের পর কবর ভেঙে মরদেহ বের করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হন এবং একজন নিহত হন।
এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আগুন জ্বলতে থাকা অবস্থায় উল্লাসের দৃশ্য সভ্য সমাজে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, “এটি শুধু আইন ভাঙা নয়, মানবিক মূল্যবোধ ও সমাজের ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।”
রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, এর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। জামায়াত ও হেফাজত ইসলাম একে ইসলামী শিক্ষা ও মানবিকতার পরিপন্থী বলে নিন্দা জানায়। অন্যদিকে নাগরিক পার্টি প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তদন্তের দাবি তুলেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং সমাজের গভীর নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, “কবর ভেঙে লাশ পোড়ানো শুধু একজনের প্রতি অবমাননা নয়, বরং গোটা মানবজাতির মর্যাদার ওপর আঘাত। এ ধরনের বর্বরতা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ জরুরি।”
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দেশে ক্রমবর্ধমান ‘মব জাস্টিস’ বা গণবিচার প্রবণতা অত্যন্ত ভয়ংকর সামাজিক সংকেত। রাষ্ট্র যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংসতা আরও বাড়তে পারে।