রাজনীতি

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সংবিধানে বিতর্ক: প্রস্তাবনা নয়, তপশিলে স্বীকৃতি চায় বিএনপি

বিএনপি চায় জুলাই অভ্যুত্থান চেতনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, এনসিপি চায় মূল সংবিধানে স্থান—তত্ত্বাবধায়ক নিয়েও নতুন প্রস্তাব

এবিএনএ: জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি। তবে তারা চায় না এই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত হোক। পরিবর্তে দলটি সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে “জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪” উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বীকৃতিসহ একটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১১তম দিনের সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ হয় না। ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও মূল সংবিধানে ছিল না, বরং পরে তপশিলে যুক্ত হয়। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকেও চতুর্থ তপশিলে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।”

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দৃঢ়ভাবে চাইছে—জুলাই ঘোষণা যেন সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় জায়গা পায়। তাদের মতে, এটি রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নীতিমালা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত।

ঘোষণাপত্র ও সংবিধান বিতর্ক
সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, “সরকার এনসিপির ইচ্ছায় বিএনপির সঙ্গে ঘোষণাপত্র নিয়ে মধ্যস্থতা করছে। কিছুদিন আগে সরকারের এক উপদেষ্টা বিএনপিকে নতুন একটি খসড়া দিয়েছে, যাতে আগের মতামতের কিছু প্রতিফলন আছে।” তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বীকৃতি ও জুলাই অভ্যুত্থান একই তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

এদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “এই ঘোষণাকে তপশিলে রেখে গুরুত্ব খাটো করা চলবে না। এটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকতে হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ভিন্ন মত
সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নতুন দুটি প্রস্তাব উঠে আসে। একটিতে সংসদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি—তিনটি দলই জানায়, তারা বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মত দেবে।

বিএনপি চায়, পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে একটি বিকল্প হিসেবে রাখার সুযোগ রাখা হোক। জামায়াত চায়, অতীতের মতোই সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ধারা থাকুক। আর এনসিপি প্রস্তাব করেছে, সংসদের উচ্চকক্ষের ভোটের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা হোক।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মতবিরোধ
কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। জামায়াত, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল এই প্রস্তাবে একমত। তবে বিএনপি চায়—জ্যেষ্ঠ তিন বিচারপতির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দিন। পরবর্তীতে বিএনপি প্রস্তাব করে, জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির মধ্যে থেকেই নিয়োগ দেওয়া হোক।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলবে। সালাহউদ্দিন জানান, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত নেই, তাদের মধ্য থেকেই একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন—এটাই বিএনপির আপডেট প্রস্তাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button