জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিং মডেল বিশ্ব সভায় ব্যাপক প্রশংসিত

এবিএনএ : জঙ্গিবাদ মোকাবেলা ও সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিং মডেল বিশ্ব সভায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ৪ দিন ব্যাপী ইন্টারপোলের ৮৬তম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে এ প্রশংসা করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ইন্টারপোলের সদস্য দেশের পুলিশ প্রধান এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
বেইজিংয়ের চায়না ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আজ শেষ হওয়া এ সম্মেলনে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- ডিআইজি (অপারেশনস) ও এনসিবি ঢাকার প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, এআইজি (এনসিবি) মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, এআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক ‘কাউন্টার টেররিজম : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান সম্পর্কেও বক্তব্য রাখেন। অধিবেশনে তিনি সামাজিক অপরাধ, সংঘবদ্ধ অপরাধ, সাইবার অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ দমনে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির বিষয়েও আলোচনা করেন পুলিশের আইজিপি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল চীন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সাথে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। এ সময় বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদ, ডানপন্থা, জঙ্গি অর্থায়ন, মানিলন্ডারিং, সাইবার অপরাধসহ অন্যান্য বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিং মডেলের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা।
চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। বৈঠকে সন্ত্রাস দমন, সাইবার অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে চীনা মন্ত্রী। সে সঙ্গে চীন বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মডেলটি তাদের দেশে চালু করার ব্যাপারে আগ্রহ জানান।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে চীন-বাংলাদেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়েও চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেন আইজিপি।
এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। সে সঙ্গে ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টিও উঠে আসে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও মিয়ানমারের পক্ষে ছিলেন আন্ত:দেশীয় অপরাধ বিভাগের প্রধান অঙ হে মিন্ট। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল সাম্প্রতিক কালে সীমান্ত পার হয়ে আসা শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র ও অনুপ্রবেশ রোধে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।
 বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি জানায়, মাদক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমার তাদের কার্যক্রম আরো জোরদার করবে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও সরকার অবগত এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনমতের কথাও তারা তাদের সরকারকে জানানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের প্রধান ইন্টারপোলের সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন নি বলেও তারা জানান।
প্রসঙ্গত, ইন্টারপোলের ৮৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা মঙ্গলবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে শুরু হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং চায়না ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চার দিনব্যাপী (২৬-২৯ সেপ্টেম্বর) এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে ইন্টারপোলের সভাপতি, মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রধান ও উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশ নেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button