সাত দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল-ইরানের অর্থনীতি চরম ক্ষতিগ্রস্ত, কে কতটা টিকবে?
গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষে দুই দেশের বাজেট পিছু হঠছে, যুদ্ধের খরচে দিশাহারা ইসরায়েল, সংকটে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা


এবিএনএ: মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা সাত দিন ধরে যুদ্ধ চলার ফলে দুই দেশের অর্থনীতি ব্যাপক চাপে পড়েছে। সামরিক ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে গাজা যুদ্ধ এবং নতুন সংঘর্ষে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ক্ষতি কয়েকশ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির জন্য এক বিশাল বোঝা।
গত শুক্রবার ইসরায়েলের অভিযানে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন, পাশাপাশি কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। জবাবে ইরান ইসরায়েলের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
এই সহিংসতা শুধুমাত্র প্রাণহানির কারণ হচ্ছে না, উভয় দেশের অর্থনীতির ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে দুই দেশের বাজেট ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক মন্দা গভীরতর হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ইসরায়েলের আর্থিক অবস্থা:
গাজার সামরিক অভিযানের কারণে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ইসরায়েলের মোট ব্যয় ২৫০ বিলিয়ন শেকেল বা প্রায় ৬৭.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে মাত্র দুই দিনে ৫.৫ বিলিয়ন শেকেল (১.৪৫ বিলিয়ন ডলার) খরচ হয়েছে। এই হারে চললে সামনের সাত সপ্তাহের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যয় গাজা যুদ্ধের খরচ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেটও বাড়ছে; ২০২৩ সালে এটি ছিল ৬০ বিলিয়ন শেকেল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ বিলিয়নে এবং ২০২৫ সালে ১১৮ বিলিয়ন শেকেলের কাছাকাছি পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ইরানের অর্থনৈতিক চিত্র:
ইরানের তেল রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী রবিবার পর্যন্ত দৈনিক তেল ও কনডেনসেট রপ্তানি নেমে আসবে মাত্র ১ লাখ ২ হাজার ব্যারেলে, যা এ বছরের গড়ের অর্ধেকেরও কম। তেলের প্রধান রপ্তানি কেন্দ্র খারগ দ্বীপ থেকে ট্যাংকার বের হয়নি এবং দক্ষিণ পার্সের গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েলের হামলার ফলে ৮০ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
২০১৮ সালের নিষেধাজ্ঞার পর ইরানের তেলের রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমেছে; ২০১৬ সালে যেখানে দৈনিক রপ্তানি ছিল ২.৮ মিলিয়ন ব্যারেল, তা ২০২২-২৩ সালে মাত্র ২ লাখ ব্যারেল এ নেমেছে। ফলে তেলের রাজস্ব প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব। সরকারি হিসেবেও মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশ হলেও বিশেষজ্ঞরা এ হার ৫০ শতাংশের উপরে মনে করেন। বেকারত্ব সরকারি ৯.২ শতাংশ হলেও প্রকৃত হার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ইরানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন।
Share this content: