বাংলাদেশ

পাটগ্রাম থানায় ভয়াবহ হামলা: সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি ছিনতাই, আহত অন্তত ২৫

চাঁদাবাজির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে থানায় হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত多数, রাজনৈতিক দোষারোপ শুরু

এবিএনএ, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় সংঘটিত এক ভয়াবহ হামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই হামলায় থানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

সূত্র জানায়, পাথরবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছিল দুই আসামি—বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে। তবে রাতেই ২০০-২৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল থানা চত্বরে ঢুকে হামলা চালায় এবং আসামিদের ছিনিয়ে নেয়। তারা থানার আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভাঙচুর করে এবং নথিপত্র তছনছ করে।

রাজনৈতিক দোষারোপ ও বিভাজন

এই ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন। তার দাবি, ইউএনওর নির্দেশে সাজা পাওয়া আসামিদের ছিনিয়ে নিতে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর চালায়।

তবে পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল এই অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “বিএনপি বিশৃঙ্খলা সমর্থন করে না। জামায়াত বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”

ঘুষের অভিযোগ ও পাল্টা বক্তব্য

পাথর মহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ইউএনও ও ওসি ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং থানায় গিয়ে তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।

ইউএনও উত্তম কুমার দাস বলেন, “পাথর কোয়ারির শর্ত ভঙ্গ করে মহাসড়কে চাঁদা তোলা হচ্ছিল। এজন্যই দুই ব্যক্তিকে আটক করে সাজা দেওয়া হয়।”

তদন্ত ও নিরাপত্তা জোরদার

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম জানান, থানায় হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, পাথর উত্তোলনে নির্ধারিত নিয়ম ভঙ্গ করে কেউ কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিস্থিতির মূল্যায়ন

পাটগ্রামে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সংশ্লিষ্ট মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজ করছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ঘুষ, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক দলগুলোর অপব্যবহারে সাধারণ মানুষ আর কত ভুগবে? এখন অপেক্ষা বিচার এবং সত্য উদঘাটনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button