ইরানের কাছে এখনো অস্ত্রমান ইউরেনিয়াম! ফের হামলার হুমকি ইসরায়েলের
যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরও ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম থাকার দাবি জানাল ইসরায়েল, আবার হামলার ইঙ্গিত


এবিএনএ: যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা হামলার পরও ইরানের কাছে এখনো রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম—এমন দাবি তুলে ফের উত্তেজনা ছড়াল ইসরায়েল। তেল আবিবের আশঙ্কা, এই ইউরেনিয়ামকে কাজে লাগিয়ে তেহরান পরমাণু বোমা তৈরির পথে অগ্রসর হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইরানের বহু সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হলেও, ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি অংশ এখনো সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত আছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট। ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, কেউ যদি এই ইউরেনিয়াম ব্যবহারের চেষ্টা করে, তাহলে ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া দিতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।
২০২৪ সালের ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তখন দাবি করা হয় যে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে গেছে।
তবে সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, তারা ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে দিতে পেরেছে—তবে এই বক্তব্যের পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
ইসরায়েলের মতে, ইরানের ১৮ হাজার সেন্ট্রিফিউজের অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেলেও, কিছু ইউরেনিয়াম নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়েছিল। যদিও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর মহাসচিব রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইরান হামলার আগেই তাদের ইউরেনিয়াম মজুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা এই দাবিকে ‘অবাস্তব’ উল্লেখ করে বলেন, “সেই পরিমাণ ইউরেনিয়াম অত দ্রুত সরিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব।”
তেল আবিবের দাবি অনুযায়ী, ইরান এখন আগের চেয়ে আরও দ্রুত গতিতে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে এগোচ্ছে। গত ১০ মাসে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর তেহরান এই কর্মসূচি জোরদার করেছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা।
মার্কিন রাজনীতিতেও ইরানের ইউরেনিয়াম কর্মসূচি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড মনে করেন, ইরান এখনো পরমাণু বোমা তৈরির পর্যায়ে যায়নি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই বিপরীত দাবি করে আসছেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ১৩ জুন থেকে ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান হাইফা ও তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে কিছু স্পর্শকাতর স্থাপনাতেও আঘাত হানে।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে এক বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।