জুনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে ৬ গুণ, জুলাইয়ে ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুনে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে


এবিএনএ: ২০২৫ সালের জুন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় ছয় গুণ বেড়েছে। মে মাসে যেখানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে জুনের ২৮ দিনের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮-তে। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কারণেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে এবং জুলাইয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ২৬২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে—১৪১ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “মে মাসের তুলনায় জুনে মৃতের সংখ্যা ছয় গুণ। এ হার অব্যাহত থাকলে আগামী মাসে মৃত্যুর সংখ্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এবার ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯,৪৮৪ জন এবং মারা গেছেন ৪১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন মারা গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়, বরিশালে ১১ জন এবং চট্টগ্রামে ৪ জন।
বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১,০৬৩ জন। তাদের মধ্যে ৩১২ জন ঢাকায় এবং ৭৫১ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন।
পিছনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি—৩ লাখ ২১ হাজার ১৭ জন রোগী ভর্তি এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৭৫।
🟥 পাথরঘাটায় সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু
বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদের চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিএ) সিরাজুম মুনিরা (৩৮) মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা এবং মনির মিয়ার স্ত্রী। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
মঙ্গলবার তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়ায় বরিশালে স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু পথে মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে এ মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
পাথরঘাটার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফাত্তাহ বলেন, “ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। মশা নিধনে পৌরসভার ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে।”