জাতীয়লিড নিউজ

গোপালগঞ্জের সহিংসতায় ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, আসকের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সমাবেশে হামলা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, শিশুসহ নিরপরাধদের হয়রানি এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন—সবকিছুই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন

এবিএনএ: গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সংঘটিত ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের সভা-সমাবেশের অধিকার চরমভাবে খর্ব করা হয়েছে এবং পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, “সেদিনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ ছিল ফ্যাসিস্ট কায়দার। তারা নির্বিচারে লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ার শেল ব্যবহার করেছে। পরে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও ভয়ভীতি ছড়িয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের ঘটনা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।”

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করার পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তিন ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সাধারণ জনতা’ নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠী রাস্তা দখলে নিয়ে ইট-পাটকেল ছুড়ে হামলা চালায়।

ঘটনার পরপরই গোপালগঞ্জে জারি হয় ১৪৪ ধারা এবং শুরু হয় নির্বিচারে গ্রেপ্তার। আসকের তথ্যমতে, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। এমনকি নিরীহ মানুষের ঘরে ঘরে অভিযান চালানো হয়, যেসব এলাকায় কোনো সহিংসতা হয়নি সেখানেও হয়রানি চলে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহত ইমন তালুকদার, রমজান কাজী, দীপ্ত সাহা ও সোহেল মোল্লার মরদেহ তাৎক্ষণিকভাবে দাফন বা সৎকারে বাধ্য করা হয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে। পরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২১ জুলাই তিনজনের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। নিহতদের পরিবারের দাবি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সংঘর্ষ সংক্রান্ত ৮টি মামলা হয়েছে, যার ৬টির নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট ৫,৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আসামিদের মধ্যে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপস্থিতিও রয়েছে।

এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৮ শিশুকে আটক করেছে, যাদের অনেককেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যদিও তাদের পরিবার দাবি করেছে, এসব শিশুরা সংঘর্ষে সম্পৃক্ত ছিল না।

তথ্য সংগ্রহে গেলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসির অসৌজন্যমূলক আচরণের কথাও উল্লেখ করেছে আসক। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা কোনো মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করেনি এবং সর্বোচ্চ সংযম দেখিয়েছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকউজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক সমাবেশে বাধা দেওয়া কখনোই যুক্তিযুক্ত নয়। আগে থেকেই পুলিশ সতর্ক থাকলে এ রকম প্রাণহানি হতো না।”

আসক জোর দিয়ে বলেছে, অবিলম্বে এই ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন এবং নির্দোষ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button