আমেরিকা

ট্রাম্প-হিলারির জন্য হুমকি তৃতীয় দলের প্রার্থী!

এ বি এন এ : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে তাবৎ আলোচনা এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরেই। তবে আলোচনায় না থাকলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন আরও দুটি দলের প্রার্থী। তাঁরা হলেন লিবার্টারিয়ান পার্টির গ্যারি জনসন ও গ্রিন পার্টির জিলস্টাইন।

জনমত জরিপ অনুসারে, এই মুহূর্তে গ্যারি জনসনের জনসমর্থন ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং জিলস্টাইনের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একপর্যায়ে গ্যারি জনসনের সমর্থন ১০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছিল, কিন্তু তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তাঁরা দুজনেই আশা করছেন যে তিনটি টেলিভিশন বিতর্কে প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা অংশ নেবেন, তাঁরাও যেন তাতে শামিল হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ন্যূনতম ১৫ শতাংশ জনসমর্থন থাকলে এই বিতর্কে অংশ নেওয়া সম্ভব। সে নিয়ম চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা আদালতে মামলা ঠুকেছিলেন, কিন্তু তা ধোপে টেকেনি।

এই দুই দলের প্রার্থী নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হবেন—এ কথা কেউ ভাবে না। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে তাঁরা প্রভাব রাখতে পারেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গ্যারি জনসন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ও তাঁর রানিংমেট বিল ওয়েল্ড ম্যাসাচুসেটসের সাবেক গভর্নর। তাঁরা উভয়েই রিপাবলিকান পার্টির সাবেক সদস্য। ফলে ট্রাম্পের প্রার্থিতায় অসন্তুষ্ট এমন রিপাবলিকানদের কেউ কেউ তাঁদের প্রতি সমর্থন জানাতে পারেন।

রিপাবলিকান পার্টির ১৩ শতাংশ সদস্য জনসন-ওয়েল্ড জুটিকে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছেন। ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্কট রিগেল ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকে নয়, গ্যারি জনসনকে সমর্থন জানাবেন।

অন্যদিকে প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত জিলস্টাইন ও তাঁর রানিংমেট বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী আজুমু বারাকা হিলারির প্রতি আস্থাহীন ডেমোক্র্যাটদের ভোট কেড়ে নিতে পারেন। বার্নি স্যান্ডার্সের অনেক তরুণ সমর্থক, যাঁরা হিলারির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রণোদিত হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না, তাঁদের কেউ কেউ হয়তো জিল-বারাকার প্রার্থিতার প্রতি সমর্থন জানাতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখে গ্রিন পার্টি তাদের স্লোগান নির্বাচন করেছে, ‘জিল-নট হিল’। অর্থাৎ হিলারিকে নয়, জিলস্টাইনকে ভোট দিন।

এই দুই দলের প্রার্থী যদি তাঁদের চলতি জনসমর্থন বজায় রাখতে পারেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। ট্রাম্প ও হিলারি উভয়েই যে গুটি কয়েক ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’ রাজ্যের ওপর বাজি ধরেছেন, তার অন্যতম হলো ফ্লোরিডা, ওহাইও ও পেনসিলভানিয়া। এই তিন অঙ্গরাজ্যে ইলিবার্টারিয়ান প্রার্থীর প্রতি জনসমর্থন ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। ফ্লোরিডা ও পেনসিলভানিয়ায় হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে গড়পড়তা ৮ পয়েন্টে এগিয়ে, ওহাইওতেও বাতাস তাঁর পক্ষে। এ অবস্থায় গ্যারি জনসন যদি ২ থেকে ৩ শতাংশ রিপাবলিকান ভোট সংগ্রহে সমর্থ হন, তা ট্রাম্পের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে তৃতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী না হলেও রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পার্টির জন্য বিপদ ডেকে এনেছেন। ১৯৯২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রস পেরো ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, যার অধিকাংশ রিপাবলিকান সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া। সে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট বিল ক্লিনটনের কাছে হেরেছিলেন রিপাবলিকান জর্জ বুশ, তিনি নিজের পরাজয়ের জন্য পেরোকেই দায়ী করেছিলেন।

২০০০ সালের নির্বাচনে মোট ভোটের হিসাবে বেশি পেয়েও ইলেক্টোরাল ভোটে পিছিয়ে থেকে জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে হেরে গিয়েছিলেন আল গোর। ফ্লোরিডায় মাত্র ৫৩৭ ভোট বেশি পেয়ে সে রাজ্যের ২৯টি ইলেক্টোরাল ভোট ছিনিয়ে নেন বুশ। সে বছর গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন র‍্যালফনেডার। ফ্লোরিডায় তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ৯৭ হাজার ভোট। বলাই বাহুল্য, এর অধিকাংশই বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাটদের ভোট। অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, ২০০০ সালের নির্বাচনে আল গোরের পরাজয়ের প্রধান কারণই ছিলেন র‍্যালফনেডার ও গ্রিন পার্টি।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button