সুন্দরবনের চরে ৭৮ জনকে ফেলে গেল বিএসএফ, নির্যাতনের বিবরণে কেঁদে উঠল ভুক্তভোগীরা
গুজরাটে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার ৭৮ বাংলাদেশিকে বঙ্গোপসাগরের চরে ফেলে দেয় ভারতীয় বিএসএফ, তিনজনকে কারাগারে প্রেরণ

এবিএনএ: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ফেলে যাওয়া ৭৮ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এদের মধ্যে তিনজনকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করছিলেন। গত ২৬ এপ্রিল ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদের আটক করে এবং ৯ মে গভীর রাতে চোখ বেঁধে ও পেছনে হাত বেঁধে বঙ্গোপসাগরের চরে ফেলে দেয়। আটকের সময় থেকে তাদের দেওয়া হয় খুব সামান্য খাদ্য ও পানি, টয়লেটে যাওয়ার অনুমতিও ছিল সীমিত, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত।
একজন ভুক্তভোগী, ফুয়াদ শেখ জানান, তার স্ত্রী ও তিন কন্যা এখনও গুজরাটে। তাকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি। আবজাল মৃধা বলেন, তাকে ও তার ছেলেকে এভাবে ধরে নেওয়া হয় এবং চোখ বেঁধে মারধর করা হয় শুধু “বাংলাদেশি” বলার কারণেই।
আরেকজন, হারুন শেখ, ৩৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন। ভারতে তার পরিবার, বাড়ি ও সন্তান সবই রয়েছে। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন এবং সেখানেই সংসার পেতেছিলেন। এখন তিনি শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিএসএফ সদস্যরা তাদের শরীরে ভারতের সিল লাগিয়ে নৃশংসভাবে মারধর করেছে। কারও পশ্চাৎদেশে সিল মেরে, কারও পায়ে লাঠি চালিয়ে নির্মমতা চালানো হয়েছে।
তিনজন তরুণ, যারা ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও পিতা-মাতা বাংলাদেশি, তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
শ্যামনগরের ইউএনও রনী খাতুন জানান, ভুক্তভোগীরা অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় ছিলেন। তাদের জন্য খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘স্বদেশ’ ও সাতক্ষীরার আইনজীবীরা জানান, এ ধরনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইনে মামলা করা উচিত।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সাকিবুর রহমান বলেন, এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া উচিত।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানবিক সংকট এবং অভিবাসীদের দুরবস্থার একটি ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।
Share this content: