

এবিএনএ: বাংলাদেশের সড়ক এখন যেন চলন্ত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাস, মিনিবাস, অটোরিকশা থেকে শুরু করে মালবাহী ট্রাক—ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।
প্রতিদিন ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত ২০ শতাংশের জন্য দায়ী ফিটনেসবিহীন মোটরযান। ব্রেক, স্টিয়ারিং, টায়ার বা ইঞ্জিনের ত্রুটিতে মুহূর্তেই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রংচটা, ভাঙাচোরা ও নোংরা বাসে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে চলছে পরিবহন ব্যবসা।
আইন থাকলেও বাস্তবায়ন দুর্বল
দেশের আইন অনুযায়ী, ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চালানো অপরাধ। এ সনদ ইস্যু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু সংস্থাটির হিসাবেই দেখা যায়, সাড়ে ছয় লাখের বেশি যানবাহনের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ নেই। ফলে তারা অবাধে সড়কে চলাচল করছে।
গণপরিবহনেই বেশি ঝুঁকি
গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত প্রায় ২৪ হাজার বাস, ১২ হাজার মিনিবাস ও ১৪ হাজার হিউম্যান হলারের হালনাগাদ ফিটনেস নেই। চুক্তিভিত্তিক পরিবহন খাতেও একই অবস্থা—সারাদেশে দুই লাখের বেশি অটোরিকশা ও অটোটেম্পো ফিটনেসবিহীন। ফলে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়েই ওঠানামা করছেন এসব যানবাহনে।
মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক
সরকার বাসের ইকোনমিক লাইফ ২০ বছর এবং ট্রাকের জন্য ২৫ বছর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু দেশের রাস্তায় এখনো ৭৫ হাজারের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাক চলাচল করছে। পুরোনো এসব যানবাহন মাঝপথে নষ্ট হয়ে যানজট তৈরি করছে, আবার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বহুগুণে।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে
আনফিট যানবাহনের কালো ধোঁয়া শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিদিন অজস্র মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এই দূষণের কারণে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “যে বাসগুলো দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে, সেগুলো যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে পারছে না। ফলে প্রাণহানির ঘটনা বেশি হচ্ছে।”
বুয়েটের এআরআই পরিচালক অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, “আনফিট গাড়ির মেকানিক্যাল ফেইলিওরের ঝুঁকি বেশি। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণই হচ্ছে এসব যানবাহন।”
সুপারিশ ও সমাধান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে—
১. ফিটনেস পরীক্ষা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন,
২. মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রুট থেকে সরানো,
৩. পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার,
৪. সড়ক নিরাপত্তা আইন শক্তিশালী করা,
৫. নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিদিন এসব গাড়ি মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। তাই সরকার, বিআরটিএ, পরিবহন ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগেই সড়কে নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।