অর্থ বাণিজ্য

ঋণের সংকটে বেসরকারি খাত, দুই দশকের মধ্যে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম

রাজনৈতিক অস্থিরতা, সুদের ঊর্ধ্বগতি ও বিনিয়োগে স্থবিরতায় ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬.৪ শতাংশে, যা ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

এবিএনএ: বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জুন শেষে এই প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশে। এটি গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সুদের উচ্চ হার, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও ঋণ খেলাপির হার বৃদ্ধির কারণে এই প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ৩১ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে, যেখানে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার পরিকল্পনা থাকবে।

২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে ঋণের প্রবাহে স্থবিরতা দেখা দেয়। বেসরকারি খাতের অনেক ঋণগ্রহীতা গ্রেফতার বা বিদেশে পলায়ন করায় নতুন ঋণ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি পূর্বের অনেক ঋণও এখন খেলাপি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।

এর পাশাপাশি ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। ২০২৪ সালে যেখানে গড় সুদহার ছিল ৯-১০ শতাংশ, তা এখন ১৩-১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে আমানতের গড় সুদহারও বেড়ে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ঋণ প্রবৃদ্ধি গত ডিসেম্বরে ৭.২৮ শতাংশে ছিল, জানুয়ারিতে কমে ৭.১৫ শতাংশে আসে, ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে দাঁড়ায় ৬.৮২ শতাংশ। এরপরও মে মাসে তা সামান্য বেড়ে ৭.১৭ শতাংশ হয়েছিল। অথচ করোনার সময়েও এই প্রবৃদ্ধি কখনো সাড়ে সাত শতাংশের নিচে নামেনি।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। জুনে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে এসেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অন্যদিকে সরকার নিজেও ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম ঋণ নিচ্ছে। গত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা, যা আগের চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা কম।

এছাড়াও সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের দায় পরিশোধে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এবং ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে, যার ফলে বাজারে তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার, জ্বালানি সংকট, বিনিয়োগের অনাগ্রহ এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ঘাটতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে ঋণের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো— বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে আবার ঋণ প্রবাহ সচল করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button