হোলি উৎসবে ত্বক ও চুলের যত্ন

এবিএনএ : দোলযাত্রা একটি হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত হোলি উৎসবটির সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসবটি সম্পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সহিত রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। প্রাচীন কাল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষে হোলি উৎসব খুবই জনপ্রিয়। এখন শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দিবস পালিত হয়।
আগামীকাল শুধুই রঙিন হওয়ার খেলা। কে কত রং মাখতে পারে। আর কে কত রং মাখাতে পারে। তবে রং খেলার জন্য ভেষজ রং সবসময়ই ত্বকের জন্য ভালো। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই রঙের মধ্যে মেশানো হয় রাসায়নিক, যা আপনার ত্বক ও চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তাই রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠার আগে, ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে জেনে নিন কিছু টিপস-
১) ২ চামচ আমন্ড অয়েল, ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল, ১ ফোঁটা রোজ এসেনশিয়াল অয়েল ও ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মেশান। এবার এই মিশ্রণ ভালো করে মাথায় মাখুন।
২) ভুলেও খোলা চুলে থাকবেন না। বিনুনি করে বেঁধে নিন। এতে রঙের রাসায়নিকে স্কাল্পের ক্ষতি কম হয়।
৩) দেহের খোলা অংশে অবশ্যই পুরু করে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
৪) রং খেলতে যাওয়ার আগে পুরুষরা দাঁড়িতে মাখুন নারকেল তেল, সরষের তেল বা আমন্ড অয়েল।
৫) রং খেলার পর এবার রঙ তোলার পালা। রঙ তোলার জন্য বাডি়তেই বানিয়ে ফেলুন একটা সহজ প্যাক। ২ টেবিল চামচ ময়দা, ১ চামচ হলুদ, ১ চামচ মধুর সঙ্গে দুধ বা দই যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে লাগিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৬) মুখের জন্য হলুদ যুক্ত কোনও ক্লিনজারও ব্যবহার করতে পারেন।
৭) রং তোলার পর অবশ্যই সারা গায়ে ভালো কোন বডি অয়েল মেখে নিন।
৮) চাইলে মধু ও শিয়া বাটার যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ও লাগাতে পারেন।
রং তো খেলবেন, কিন্তু বাজার থেকে কেনা রঙে থাকে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক। সেই রাসায়নিক থেকে আপনার চুল, ত্বকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। তাই এবার দোল উৎসবে বাজার থেকে কেনা রং নয়, বরং বাড়িতে বসেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের সব রং।
এবার জেনে নিন কোন রং কী দিয়ে বানাবেন?
খয়েরি- চা পাতা, কফি বা খয়ের দিয়ে বানাতে পারেন খয়েরি রং। চা পাতা ফুটিয়ে তারপর তা বেটে পেস্ট বানাতে পারেন। কফি গুঁড়ো বা খয়েরের সঙ্গে জল মিশিয়েও পেতে পারেন খয়েরি রং।
কমলা – মিক্সিতে কমলা রঙের গাঁদাফুল বা পলাশ ফুলের পাপড়ির পেস্ট বানিয়ে তৈরি করতে পারেন কমলা বা গেরুয়া রং।
সবুজ- সবুজ রং পেতে আপনি বেছে নিন মেহেন্দি পাতা, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, নিম পাতা, গুলমোহর পাতা। এবার মিক্সিতে পেস্ট করে বানিয়ে ফেলুন মন মতো সবুজ রং।
নীল– শুকনো নীল গুলমোহর ফুলকে মিক্সিতে পেস্ট করে, তার সঙ্গে জল যোগ করে বানিয়ে নিন গাঢ় নীল রং।
হলুদ রং– হলুদ রঙের গেঁদা ফুলের পাপড়ি পেস্ট করে বানাতে পারেন। অথবা গুঁড়ো হলুদে জল যোগ করেও আপনি হলুদ রং বানাতে পারেন।
গোলাপি রং– বিটের রস বানান। তার সঙ্গে যোগ করুন কিছুটা দুধ। এবার জল মিশিয়ে নিন। পেয়ে যাবে গোলাপি রং।
লাল রং– লাল রং পেতে বানিয়ে নিন টকটকে লাল রঙের জবা ফুলের পাপড়ির পেস্ট।
কালো রং- আমলকি ফুটিয়ে একটা ঘন পেস্ট বানান। তারপর তা কোনও লোহার পাত্রে রাখুন। পরদিন সকালে সেই পেস্টের সঙ্গে জল যোগ করুন। কুচকুচে কালো রং পেয়ে যাবেন।
সতর্কতা
# হোলি উৎসবের আনন্দ যেন বিপদ ডেকে না আন সেজন্য সতর্ক থাকুন। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে কিংবা ধুলা-ধোঁয়া কিছু লাগলেই হাঁচির পর হাঁচি শুরু হয়, একটু বেশি হলেই সর্দি লেগে যায়, জ্বর আসে, ইত্যাদি সমস্যা হলে রং থেকে দূরে থাকুন।
# হাঁপানি থাকলে আরেক ধাপ বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এ সময় রং থেকে একেবারেই দূরে থাকবেন। আবার রঙে জামা-কাপড়-মাথা ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গা-মাথা মুছে, কাপড় পাল্টে ফেলুন।
# ডায়াবেটিস রোগীদেরও সাবধান হওয়া জরুরি। এ দিন ভুলভাল খাবার থেকে একেবারেই বিরত থাকুন। নতুবা বিপদ হতে পারে।
# হার্টের রোগীরা হোলি দিন সাবধানে থাকুন। হাঁটু-কোমরে ব্যথা থাকলে নাচানাচি শুরু করার আগে তা মাথায় রাখুন। নিয়মিত যে সব ওষুধ খান, সে সবই খেয়ে তবেই রং খেলায় মাতুন।
# সস্তার রঙে ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক মেশানো থাকে। এতে ত্বকের পাশাপাশি কিডনি বা লিভারের সমস্যা হতে পারে। শুধু তাই নয়, এসব রঙের ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে। তাই হোলি খেলার আগে এসব রং থেকে দূরে থাকুন। এর পরিবর্তে প্রকৃতিক উপাদানে তৈরি রং সংগ্রহ করুন। কেননা পরিবেশ সহায়ক রং ব্যবহার করলে সমস্যা কম হয়।
তবে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করলেই যে অ্যালার্জির ছুটি, এমন নাও হতে পারে। গন্ধে অ্যালার্জি থাকলে আবিরে সুগন্ধী মেশাবেন না। ত্বক জ্বালা করলে বা চুলকালে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে ক্যালামাইন লাগান। রং বেশি করে বানান যাতে সবাই এই রং ব্যবহার করেই দোল খেলতে পারেন। তবে মারাত্মক আমবাতের ধাত, বাড়াবাড়ি রকমের একজিমা বা সোরিয়াসিস, ত্বকে কোনও সংক্রমণ, হাতে বা পায়ের নখে ছত্রাক থাকলে, মুখে অতিরিক্ত ব্রণ থাকলে রং মাখা বিপজ্জনক।
Share this content: