আমেরিকা

হিলারিকে ভোট দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটনের বাংলাদেশি কমিউনিটি

এবিএনএ : ডিস্ট্রিক্ট কলাম্বিয়ার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে হিলারিই সেরা। একইভাবে ভাবছে আর্লিংটন, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিও। হিলারিকেই ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। বাংলাদেশি কমিউনিটি হিলারিকে প্রায় শতভাগ ভোটই দেবে এমনটাই মনে করছেন কমিউনিটির নেতারা। তাদের প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনই জয়ী হবেন।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) ভার্জিনিয়ার শেনানদোহ জাতীয় পার্কে কমিউনিটির একটি পিকনিক কর্মসূচিতে কথা হচ্ছিলো অনেকের সঙ্গে। শীত শুরুর আগে এটাই পিকনিক করার শেষ সুযোগ, আর সে কারণেই অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জনা পঞ্চাশেক মানুষ এই পিকনিকে শামিল।
শেনানদোহ প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। সে নিয়ে পরে লেখা যাবে। তবে সেখানে সম্মিলিত বাংলাদেশি এই দলটি, ডিস্ট্রিক্ট কলাম্বিয়ার একটি ভাইব্র্যান্ট কমিউনিটিরই পরিচয় দিলো।

কথা হচ্ছিলো ড. বদরুল হুদা খানের সঙ্গে। সস্ত্রীক যোগ দিয়েছিলেন এই কর্মসূচিতে। ই-লার্নিংয়ের জনক খ্যাত এই বদরুল হুদা খান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ। ১৭ ভাষায় বিশ্বের পাঁচশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য তার লেখা বইগুলো। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রকে মানগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে দিচ্ছে, তবে বাংলাদেশিরা তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনকেই বেছে নিতে চায়।

বদরুল খানের স্ত্রী ড. সীমা খান এখানকার ফেডারেল এভিয়েশনে প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। সংগীত প্রতিভার অধিকারী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তথা গোটা মুসলিম কমিউনিটির জন্যই হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা জরুরি।

নারী বিদ্বেষী, নারীর প্রতি নোংরা মনোভাবের জন্যই ট্রাম্পকে ভোট না দেওয়ার কথা বললেন সীমা।

পিপলএনটেক নামে এখানকার একটি মূলধারার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আবুবকর হানিপও এসেছিলেন সপরিবারে। তিনি বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে এর আগে তিন দফা প্রসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এমন প্রার্থী কখনোই যুক্তরাষ্ট্র পায়নি।

দেশটির রাজনীতির গুণগত মান অনেক নিচে নেমে গেছে বলেই মনে করেন তিনি। হানিপ বলেন, ভোট নিয়ে এতটা নোংরা রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে হতে পারে তা একসময় কল্পনারও অতীত ছিলো।

তার স্ত্রী ফারহানা হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নারীর উচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সোচ্চার হওয়া। তাকে এমনভাবে হারিয়ে দিতে হবে, যেন এমন নারী বিদ্বেষীরা আর কখনোই প্রার্থী হওয়ার সাহসটুকু না পায়।

রাদোয়ান চৌধুরী এখানকার কমিউনিটির সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করেন। তিনিই বিস্তারিত বলছিলেন। মত দিলেন, বাংলাদেশিরা কেনো ভোট দেবে হিলারি ক্লিনটনকে। তার মতে, সকল যোগ্যতার মাপকাঠিতেই হিলারি ক্লিনটন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার গোয়ার্তুমি ও নোংরামির সকল পরিচয় ইতোমধ্যে দিয়েছেন, সুতরাং তারা ট্রাম্পকে পছন্দ করছেন না।

রাদোয়ান আরও বলেন, অতীতের নির্বাচনগুলোতে জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভোট দেওয়ার প্রবণতা কম ছিলো, কিন্তু ট্রাম্পের কথা ও আচরণ এবার তাদের অনেক বেশি ক্ষুব্ধ করেছে। আর তারা বুঝতে পেরেছে ভোট না দিলে এর প্রতিশোধ যেমন নেওয়া যাবে না, তেমনি পরবর্তী সময়ে তার জন্য দিতে হবে বড় ধরনের মূল্য। আর সে কারণেই এ বছর তাদের অধিকাংশই ভোট দিতে যাবে।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাদোয়ান বলেন, অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে জাতীয়ভাবে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়লেও এই সংখ্যালঘু গ্রুপগুলো ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট দিতো। এরা ভোটকে নিয়ে সামান্যই মাথা ঘামাতো। কিন্তু এবার যখন তারা নিজেরাই হুমকির মুখে, যখন তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে, তখন ভোট দিতে তারা যাবেনই।

মুসলিম আমেরিকানদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ট্রাম্প বলেছেন মুসলিমদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র করে দেবেন। একই রাষ্ট্রে নাগরিকদের মধ্যে আলাদা আলাদা পরিচয়পত্র একটি চরম অবমাননা। মুসলিমদের ভোট দিয়েই সেই অবমাননার হাত থেকে মুক্ত হতে হবে। তা সেজন্য হিলারিকে ভোট দিতে হবে।

তবে বাংলাদেশি কমিউনিটিরও অনেকেই ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার কাজে পিছিয়ে। ওয়াশিংটন, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়ায় যত বাংলাদেশির বসবাস, তাদের একটা বড় অংশ নিবন্ধিত হননি।

রাদোয়ান বলেন, এটি একটি বড় সমস্যা। রাজনৈতিক সচেতনতা অনেকের মধ্যেই নেই। অতীতে কে ভোট দিলো না দিলো, তা খুব একটা ম্যাটার করতো না, কিন্তু এবছর ভোট সত্যিই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যারা ভোটার হননি তারা ভুল করেছেন।

কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত করতে এ ধরনের ছোটবড় জমায়েত খুব কাজ দেয় বলেই মত দিলেন এই তরুণ সংগঠক। সবার জন্য সমান সুযোগ আর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করাই এই যুবকের লক্ষ্য।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button