খেলাধুলা

স্যামির অবিশ্বাস্য ইনিংসে রাজশাহীর নাটকীয় জয়

এবিএনএ : বিপিএলের সেরা ম্যাচের দেখা মিলল অবশেষে। অবিশ্বাস্য বলেও যেন বোঝানো যাচ্ছে না ড্যারেন স্যামির ইনিংসটাকে। ২৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের সেই ইনিংসে তামিম ইকবালদের বিদায় করে দিলেন স্যামি। রাজশাহী কিংস চলে গেল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। চট্টগ্রামের ৮ উইকেটে তোলা ১৪২ রান ৩ উইকেট আর ৯ বল হাতে রেখে পেরিয়ে গেল রাজশাহী।
অথচ স্যামি যখন ব্যাট হাতে নামেন, রাজশাহীর বিদায়ই যেন দেখা যাচ্ছিল। সাকলাইন সজীবের এক ওভারে নুরুল হাসান ও জেমস ফ্রাঙ্কলিনকে হারিয়ে ধুঁকছিল রাজশাহী। ৫৭ রানে নেই ৬ উইকেট। শেষ চার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে স্যামিকে মিলিয়ে দিতে হতো ৫৪ বলে ৮৬ রানের কঠিন এক সমীকরণ। রাজশাহী ওভারে ৬ করেই তুলতে পারছিল না, সেখানে ম্যাচ জিততে তুলতে হবে ওভারে ১০ করে। মোহাম্মদ নবীর করা পরের ওভারের প্রথম তিন বলে টানা তিন চার মেরে স্যামি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘চ্যালেঞ্জটা আমি নিচ্ছি।’
আর সেটাই শেষ পর্যন্ত দারুণভাবে মিলিয়েও দিলেন। সাতটি চার ও ২ ছক্কায় খেললেন ঝোড়ো ফিফটি। প্রথমে মেহেদী মিরাজের সঙ্গে ২০ বলে গড়লেন ৩৭ রানের জুটি। মিরাজও হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেলেই যেন আসল স্যামির দেখা মিলল। অষ্টম উইকেটে ফরহাদ রেজার সঙ্গে ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়লেন মাত্র ২৫ বলে!
রাজশাহী কিংস অধিনায়কের সৃজনশীলতার কিছু নিদর্শন তাঁদের ফিল্ডিংয়ের সময় বেশ কবার দেখা গেছে। কেসরিক উইলিয়ামস একেকটা উইকেট নেন আর তাঁকে ঘিরে ছবি তোলার ভঙ্গিমায় অদ্ভুত সুন্দর সব উদ্‌যাপন করেন। স্যামিদের উদযাপনটা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকল।
একইভাবে কল্পিত অদৃশ্য ক্যামেরায় সতীর্থরা এসে ছবি তুলল ফরহাদ ও স্যামির। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে ফরহাদ ততক্ষণে ২ রান নিয়ে ফেলেছেন। ম্যাচও জিতে গেছে রাজশাহী। তাদের জয়ের উদ্‌যাপনটা তাই দেখাল আরও সুন্দর। যদিও স্পষ্ট মনে হলো, এই উদ্‌যাপন যে তারা জিতলে করবেন, তাও ঠিক করে রাখা ছিল! কতটা আত্মবিশ্বাস দলের ভেতর ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন স্যামি। অধিনায়ক নিজেই যে সেটা পূরণের ভার নিয়েছেন!
অথচ চিটাগংয়ে দেওয়া ১৪৩ রান একটা সময় অনতিক্রম্যই মনে হচ্ছিল রাজশাহীর। প্রথম ১১ ওভারে তাদের রান ৬ উইকেটে ৫৭। ৫৪ বলে প্রয়োজন ৮৬ রান, আস্কিং রান রেট ১০-এর কাছাকাছি। কিন্তু স্যামি এত অনায়াসে সেটা মিলিয়ে দিলেন, স্কোরে আরও গোটা কুড়ি রান থাকলেও যেন ক্ষতি হতো না!
চট্টগ্রাম অবশ্য আরও অন্তত ২০-২৫ রানের আক্ষেপেই পুড়ল। ওপেনার ডোয়াইন স্মিথ ০ রানে আউট হওয়ার পরও ভালো শুরু পেয়েছিল তারা। ক্রিস গেইল মাঝে তিন ম্যাচে ‘ঘুমিয়ে’ থাকার পর আজ জেগে উঠেছিলেন। ৫ ছক্কা আর ২ চারে ৩০ বলে ৪৪ রান করে আউট হয়েছেন জেমস ফ্রাঙ্কলিনের ফুলটসে।
গেইলের সঙ্গে দারুণ জমে উঠেছিল তামিম ইকবালের জুটিটা। ৫০ বলে দুজন যোগ করেন ৭৪ রান। গেইল ফিরতেই হঠাৎই চিটাগংয়ের ছন্দপতন! খানিকপরে উইলিয়ামসের স্লোয়ার তুলে মারতে গিয়ে ফেরেন তামিমও। তার আগে টুর্নামেন্টে নিজের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন বাঁহাতি ওপেনার। বিপিএলে এক আসরে এটাই সবচেয়ে বেশি ফিফটির নতুন রেকর্ড।
তামিম-গেইল যেভাবে এগোচ্ছিলেন, চিটাগংয়ের রানের পাহাড় গড়া কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু উইলিয়ামস ও ফরহাদ রেজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১০.৩ ওভারে তাদের রান ১ উইকেটে ৮২ থেকে ১৮.৬ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩২ হয়ে গেছে। ১৯তম ওভারেই ১ রানের মধ্যে পড়েছে তাদের ৩ উইকেট। শেষের দিকের ওভারগুলোই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল। রাজশাহী বল হাতে তখন প্রতিপক্ষের উইকেট-বৃষ্টি ঘটিয়েছে, আর নিজেরা ব্যাট হাতে করেছে রানের বন্যা। নাকি টর্নেডো? স্যামির ইনিংসটাকে তো তা-ই বলা উচিত। আর তাতেই যেন হঠাৎ খড়কুটো হয়ে বিদায় নিল তামিমের দল!
আজ দিনের অন্য ম্যাচের পরাজিত দলের সঙ্গে আগামীকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে রাজশাহী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (তামিম ৫১, স্মিথ ০, গেইল ৪৪, শোয়েব ১৪, এনামুল ১১, নবী ৫, জহুরুল ১১*, রাজ্জাক ০, তাসকিন ০, সাকলাইন ১*; উইলিয়ামস ৪/১১, মিরাজ ০/৩৬, আফিফ ০/২৫, স্যামি ০/২০, ফরহাদ ২/২৬, ফ্রাঙ্কলিন ১/৮, নাজমুল ০/১৬)।
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (নুরুল ৩৪, মুমিনুল ৪, আফিফ ০, সাব্বির ১১, প্যাটেল ৫, ফ্রাঙ্কলিন ২, স্যামি ৫৫*, মিরাজ ১০, ফরহাদ ১৯* ; রাজ্জাক ১/১৭, শুভাশিস ২/২৮, স্মিথ ০/১৩, তাসকিন ০/৩১ , সাকলাইন ২/২৪, নবী ১/৩০)।
ফল: রাজশাহী ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ড্যারেন স্যামি।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button