এ বি এন এ : জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্যে ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ সফরের সময় বিএনপি-জামাতসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যে কোন অপশক্তির অপতৎপরতা শক্তহাতে প্রতিহত করার পাশাপাশি নিউইয়র্কে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বজনীন সংবর্ধনা’ প্রদানকল্পে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ’র ব্যানারে জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নয়া কমিটি গঠনের জন্যেও সভানেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এ সময় শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের আলোকে ৫ দফা দাবিনামাও উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, ১. অনতিবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ‘সার্বজনিন সংবর্ধনা কমিটি’ গঠন করা। ২. যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান কর্তৃক ক্ষত-বিক্ষত বর্তমান কার্যকরি কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ায় নতুন কার্যনির্বাহি কমিটি গঠন করার উদ্যোগ গ্রহন করা। ৩. প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সফরকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সৃষ্ট দ্বিধাবিভক্তি দূর করে তাদেরকে যথাযথভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা। ৪. প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য এখন থেকে সর্বাত্মক প্রচার ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার এবং ৫. বিএনপি-জামাতের যে কোন অপচেষ্টাকে শক্তহাতে প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহন করা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত নেতা-কর্মীদের এ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন। মঞ্চে উপবেশন এবং প্রশ্নের উত্তর প্রদানকারি নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল ও ওহিদুর রহমান মুক্তা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, উপ-প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, নির্বাহী সদস্য শামসুল আবদিন, আনোয়ার হোসেন, নূরল আবসার সেন্টু, রুহেল চৌধুরী, সেপু রহমান, মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ায বাবুল, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরন্নবী কমান্ডার, মাহী চৌধুর, নূরুল আমিন বাবু, সাইকুল ইসলাম, শিবলু ছাদেক, ছমির উদ্দিন, নীলু চৌধুরী প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালন করেন উপ-প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘ শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের কিছু অসাংগঠনিক বক্তব্য-বিবৃতি, হুমকি-ধামকি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। যেটা সংগঠনের ঐক্য, সংহতিকেই শুধু বিনষ্ট করছে না, অধিকন্তু সংগঠনের মধ্যে একটা বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। তার এই সকল অনাঙ্খাকিত কার্যক্রম কোন ধরনের বিভ্রান্তি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সফরকে বিঘিœত করতে না পারে তার জন্যই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।’আরো বলা হয়, ‘ সংগঠনের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী সিদ্দিকুর রহমানের অসাংগঠনিক ও অগঠনতান্ত্রিক কার্যক্রমের সবিস্তারে ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই, আপনারা সবই অবগত আছেন। তারপরও কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করে পারা যায় না। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত কমিটিকে অবজ্ঞা করে নিজের আজ্ঞাবহ কিছু বির্তকিত ব্যক্তিকে সংগঠনের বিভিন্ন পদ-পদবীতে পদায়ন করার অপচেষ্টা করা, বিগত প্রায় চার বছর সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির কোন সভা না করা, সংগঠনের তহবিল ব্যবহারে অস্বচ্ছ্ব্তা, সহযোগী সংগঠনগুলির মধ্যে নানা দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করা, কথায় কথায় হাই কমান্ডের দোহাই দিয়ে সাংগঠনিক রীতি-নীতিকে অবজ্ঞা করে এখতিহার বহির্ভূতভাবে কার্যকরী কমিটির সদস্য-কর্মকর্তাগণকে বহিস্কার এবং তিরস্কার করা (যদিও হাই কমান্ড এই সকল বিষয়ে মোটেই অবগত নয়), সরকার ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে চিহ্নিত রাজাকার এবং ১৫ আগষ্ট নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারী ব্যক্তিদেরকে নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতিকে সংবর্ধনা প্রদান করার অপচেষ্টা চালানো, সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকিকে দিয়ে সরকারের ভাবর্মূতি বিনষ্টকারী বক্তব্য প্রদানে সহায়তা করা, নিজে সংবাদ সম্মেলন করে দেশে সু-সাশনের অভাব, দেশের আইন আদালত ও প্রধান বিচারপ্রতি এবং মন্ত্রীদের কার্যক্রম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা, বিএনপি জামাতের পৌষ্য সিজার-সাফাদি গং কর্তৃক সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নির্লিপ্ততার পরিচয় দেওয়া, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে অধিকাংশ সময় বাংলাদেশে অবস্থান করা, ইত্যাদি।’
‘সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারে তার ব্যাপারে এক ধরনের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। যা কিনা প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন সংবর্ধনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরকে সর্বাত্মক সাফল্য মন্ডিত করার জন্য ৫ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করছে।’আসছে ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিউইয়র্কে গণসংবর্ধনা প্রদানের তারিখ ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। সেটি অনুষ্ঠিত হবে ম্যানহাটানে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে। এই হোটেলেই অবস্থান করবেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা-সমাবেশের যাবতীয় তহবিল আসে ঢাকাস্থ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে। অথচ ঐ সংবর্ধনার নামে প্রতি বছরই বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু এবার সেটি ঘটতে দেয়া হবে না। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সকলে আজ ঐক্যবদ্ধ।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরো অভিযোগ করা হয় যে, ‘সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নেতৃত্বে নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ীই গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে শেখ হাসিনাকে স্মরণকালের বৃহৎ একটি সংবর্ধনা দেয়া হবে। এজন্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন একযোগে কাজ করছে।’ ‘প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। তাই নাগরিক সংবর্ধনাকেও দলীয় গন্ডিতে আবদ্ধ না রেখে সকলের জন্যে উম্মুক্ত রাখা হবে’-উল্লেখ করেন মামুন।