আমেরিকালিড নিউজ

চীনের নিষিদ্ধ নগরীতে ট্রাম্পই প্রথম!

এবিএনএ : কাল পর্যন্ত ধোঁয়াশায় মোড়া ছিল চারপাশ। গতকাল সকাল হতে না হতেই সব ঝকঝকে। এয়ার ফোর্স ওয়ান মাটি ছোঁয়ার ঠিক আগে বেজিংয়ের আকাশটাও যেন আচমকা আরও নীল হয়ে গেল!যান-চলাচল আর কারখানায় সাময়িক ভাবে উৎপাদন কমিয়ে রাতারাতি দূষণ নিয়ন্ত্রণে এক প্রকার নজিরই তৈরি করল চীন। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গতকাল এ ভাবেই অভ্যর্থনা জানাল শি চিনফিং-এ চীন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর সেরে গতকাল চীনে পা রেখেছেন ট্রাম্প। লাল গালিচা পাতাই ছিল। স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট তাতে পা রাখতেই বেজে উঠল সেনাবাহিনীর ব্যান্ড। স্বাগত জানাতে চীনা পতাকা হাতে হাজির কচিকাঁচাদের ভিড়।

তার পরেই ট্রাম্পকে নিয়ে ‘নিষিদ্ধ নগরীর’ দিকে হাঁটা দিলেন চিনফিং। ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যেখানে বাস করেছে চীনের রাজ-পরিবার। ১৯৪৯-এ আধুনিক চীনের জন্মের পর থেকে সরকারি ভাবে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনায়ককে সেখানে ডাকা হয়নি। ট্রাম্পই প্রথম।আসল চমকটা এখানেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের খাতিরে দূষণ নিয়ন্ত্রণকে চীনের সৌজন্য বলেই দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ। কিন্তু প্রথা ভেঙে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ নগরীতে প্রবেশাধিকার কেন! সেখানেই আবার নৈশভোজের বন্দোবস্ত, কিংবা অতিথি দম্পতিকে গিয়ে এক ফাঁকে পিকিংয়ের অপেরা দেখিয়ে আনার মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্টের অন্য কোনও সমীকরণ কাজ করছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তারাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ফুরোনোর আগে বারাক ওবামা যখন চীনে এসেছিলেন, তখন তো তার জন্য লাল গালিচারও বন্দোবস্ত করা হয়নি।আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া পরমাণু কর্মসূচি রুখতে চীনের সঙ্গে এবার একটা বোঝাপড়ায় আসতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিমের উপর চাপ তৈরিতে তিনি যে তাদের কূটনৈতিক সঙ্গী চীনকে পাশে টানতে চান, সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প। স্পষ্ট বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে সামলাতে চীনা প্রেসিডেন্ট বরাবরই আমাদের সাহায্য করেছেন।’’অথচ এর আগে কিন্তু এ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে চীনের উপর চোটপাট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে আসার আগে থেকে বিশ্ববাণিজ্যে চীনের দুর্নীতি নিয়েও সরব তিনি। কূটনীতিকদের দাবি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখেই এখন বন্ধুত্বের সুরে মজেছেন ব্যবসায়ী হিসেবে জীবন শুরু করা ট্রাম্প। এরই মধ্যে ৯০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়ে গিয়েছে দু’দেশে।কিন্তু চিনফিংয়ের কী এমন দায়! দেশে তো তিনিই এখন সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন। রাজনৈতিক সঙ্কট না থাকলেও, দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরও ভাবাচ্ছে চিনফিংকে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাদাগিরি নিয়ে ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স বহু দিন ধরেই সুর চড়িয়ে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর পর ওই দু’টি দেশেই যাবেন। তাই আগাম আটঘাট বেঁধে রাখতেই চিনফিংয়ের এমন রাজকীয় ট্রাম্প-বরণ কি না, প্রশ্ন উঠছে।ট্রাম্প কী করেন, সে দিকেও তাকিয়ে গোটা দুনিয়া। বিশেষ কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হোক, বা কারও নিন্দা— মার্কিন প্রেসিডেন্ট এত দিন টুইটারকেই সব চেয়ে বড় অস্ত্র করে এসেছেন। কিন্তু এ বার কী হবে? চীনে যে ওই সামাজিক মাধ্যমটাই নিষিদ্ধ! ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আধিকারিকেরা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, চীনে থেকেও টুইট করা থামাবেন না ট্রাম্প। সহায়ক, তার বিশেষ বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি!

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button