,
প্রচ্ছদ | জাতীয় | আন্তর্জাতিক | অর্থনীতি | আমেরিকা | লাইফ স্টাইল | ভিডিও নিউজ | ফিচার | আমেরিকা | বিনোদন | রাজনীতি | খেলাধুলা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | শিক্ষা

সিরিয়ার রণাঙ্গনে দোষারোপের খেলা

এ বি এন এ : সিরিয়ার রণাঙ্গণে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ ফের ভেঙে পড়েছে। রণাঙ্গণের দুই নেতৃত্বস্থানীয় শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দোষারোপের খেলায় কার্যত সেখানকার সংকট নিরসনের পথ আবারও সংকুচিত হয়ে গেল। এবারের এই কাদা ছোঁড়াছুড়িতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগের আঙুল উঠছে মস্কোর দিকে।

আর রাশিয়ার অভিযোগের তীর ওয়াশিংটনের দিকে। যদিও প্রথম দিকে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপ জাবাত ফাতেহ আল-শামকে (সাবেক নুসরা ফ্রন্ট) অভিযুক্ত করে আসছিল।

দফায় দফায় ফোনালাপ, আলোচনা, বৈঠকের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। দু’পক্ষের তরফেই তখন বলা হয়, এই চুক্তির উদ্যোক্তা তারা, এটি বাস্তবায়নে তারা যা করা দরকার সব করবে। তারা চায় সংঘাত বন্ধ হোক। আর চুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সব পদক্ষেপ নেবে তারাই।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‍আওতায় সিরিয়াজুড়ে কেবল জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দমন‍াভিযান ছাড়া সবরকমের সংঘাত বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ওয়াশিংটন-মস্কো। চুক্তির ফলেই বিভিন্ন পক্ষের দখলকৃত যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ নিয়ে প্রবেশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে অনুমতি দেয় জাতিসংঘ।

কিন্তু কার্যকরের মাত্র ৮ দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে আলেপ্পোর উরাম আল-কুবরায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়।

হামলার পর বহরে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ যায় ২০ বেসামরিক লোকের। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ওই এলাকায় হামলার পর থেকেই ওয়াশিংটন-মস্কো ফের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও প্রত্যাখ্যানের খেলায় জড়িয়ে যায়।

সিরিয়া যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জড়িয়েছে বাশার আল-আসাদকে গদিচ্যুত করা বা তার গদি রক্ষার প্রশ্নে। ওয়াশিংটন চাইছে মধ্যপ্রাচ্যের চিহ্নিত ‘কাঁটা’ আসাদকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলতে। আর মস্কো চাইছে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বিশ্বস্ত ‘বন্ধু’ আসাদকে দামেস্কের সিংহাসনে বসিয়ে রাখতে।

মার্কিন বাহিনী তাদের লক্ষ্যপূরণে কাজ করছে আসাদ বিদ্রোহী বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে। আর রুশ বাহিনী কাজ করছে সরাসরিই দামেস্কের হয়ে।

যদিও দু’পক্ষই বলে আসছে, তারা সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল এলাকা দখল করে খেলাফত ঘোষণা করা ইসলামিক স্টেট (আইএস) দমনে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাদের সঙ্গে ময়দানে আছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, তুরস্ক ও ইরানের মতো দেশগুলো।

এরমধ্যে ফ্রান্স-ব্রিটেন আছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে, আর তুরস্ক ও ইরান আছে রাশিয়ার পক্ষে। অবশ্য তুরস্কের অবস্থান জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের আগেও ছিল ঠিক উল্টো।

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, উরাম আল-কুবরার ওই হামলায় ত্রাণবাহী বহরের ৩১টি গাড়ির মধ্যে ১৮টি ধ্বংস হয়ে যায়। আর মারা যান ২০ জন। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ত্রাণবাহী বহর বন্ধ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় জাতিসংঘ।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদফতর পেন্টাগনের দুই কর্মকর্তার মতে, যখন বহরটি আক্রান্ত হয় ঠিক তখন ওই এলাকার আকাশে চক্কর দিচ্ছিল রাশিয়ার দু’টি সুখোই এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান। যার ফলে তারা মস্কোর দিকেই আঙুল তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া, অন্যান্য তথ্য প্রমাণও এরই পক্ষে কথা বলছে।

এ কথা স্পষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বেন রোডস বলছেন, হামলাটির জন্য রাশিয়াকেই দায়ী মনে করছে হোয়াইট হাউস। যদিও রাশিয়ার যুদ্ধবিমানই হামলায় অংশ নিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট বলছেন না তিনি।

কিন্তু হোয়াইট হাউসের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল ইগর কোনাশেঙ্কভ বলছেন, হামলা যখন হয় তখন আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রিডেটর স্ট্রাইক ড্রোন (হামলায় ব্যবহৃত হয়) উড়ছিল।  বাহনগুলোতে আগুন ধরার ঠিক আগে কয়েক মিনিটের জন্য ড্রোনটি বহরের ওপর এসে যায়। এরপর আগুন ধরে গেলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এটি চলে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি অভিযুক্ত না করলেও তিনি বলছেন, এ ধরনের ড্রোন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে সটকে পড়তে পারে। তবু আমরা এখনই উপসংহার টানছি না।

অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার আগে হামলাটি নিয়ে পৃথক মন্তব্য করে মস্কো। প্রথম দিকে বলা হয়, রাশিয়া বা সিরিয়ার কোনো বিমান এই হামলা চালায়নি। তাছাড়া, বহরটি আকাশ থেকেও হামলার শিকার হয়নি। বরং কোনো ঘটনায় এতে আগুন ধরে যায়।

এরপর বলা হয়, রাশিয়াকে অভিযুক্ত করলেও সে দাবির সমর্থনে আসলে মার্কিন প্রশাসনের হাতে ‘কোনো তথ্য নেই’। আর এ নিয়ে আমাদেরও কিছু করার নেই। আর তৃতীয় দফায় জেনারেল ইগর কোনাশেঙ্কভই বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে যা বুঝেছি, হামলাটা আসলে কারও নির্দেশে হওয়ার মতো নয়। তাছাড়া, বোমা ‍হামলায় যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তেমন কিছুও দেখিনি।

বরং মনে হয়েছে পণ্য থেকে আগুন লেগেছে, অথবা মাটিতেই কিছু একটা ঘটেছে। আর এর জন্য তিনি সন্দেহের তীর ছোঁড়েন বহরের স্বেচ্ছাসেবী ‘হোয়াইট হেলমেটস’র দিকে। তার মতে, জাবাত ফাতেহ আল-শামের ঘনিষ্ঠ হোয়াইট হেলমেটস কীভাবে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে চলে আসতে পারলো এবং কীভাবে তাদের ক্যামেরা পরিস্থিতি ধারণ করতে পারলো তা তারাই বলতে পারে। এমনকি এই হামলা কারা কেন চালিয়েছে, তা-ও হয়তো তারা বলতে পারবে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা ধারণা, হোয়াইট হাউস মনে করে এই হামলাটি যদি রাশিয়া বা সিরিয়া করে থাকে, তবে তার পেছনে কারণ হতে পারে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ত্রাণবাহী বহরের প্রবেশ ঘটলে আসাদবিরোধীরা যুদ্ধবিরতির সুযোগ বুঝে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে জোরালো অভিযানের প্রস্তুতি নিতে পারে এমন অবিশ্বাস। যে অবিশ্বাসের কথা আগে থেকেই বলে আসছিলো দামেস্ক।

তাছাড়া, এই হামলার আগেই ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্বাঞ্চলের দেইল এজোরে সরকারি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ৬০ জনের অধিক সৈন্য নিহত হয়। যেটাকে ‘ভুল’ স্বীকার করে দুঃখও প্রকাশ করে ওয়াশিংটন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যে এই ধরনের নজিরবিহীন ‘ভুল’ দামেস্ক ও মস্কোকে অবিশ্বাসী করে তুলে থাকতে পারে। আর এই হামলা যে রুশ বাহিনী বা তাদের অনুগত কেউ চালিয়ে থাকতে পারে, তার নজির হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে মস্কোর অসংলগ্ন ও স্ববিরোধী  কথাবার্তাই।

এমন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের খেলার মধ্যেই বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই লাভরভসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। বৈঠকের পর এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি।

বক্তৃতায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মস্কো ও দামেস্কের আন্তরিকতার প্রশ্ন তুলে কেরি বলেন, সিরিয়ার ভাগ্য সুতোয় ঝুলিয়ে রাখবেন না। সোমবারের ওই হামলার ব্যাপারে বারবার কথা ঘোরানোয়ও ক্রেমলিনের সমালোচনা করেন তিনি। কেরি বলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে এখন যুদ্ধবিমানগুলোকে মাটিতে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি মস্কো-দামেস্ককে আন্তরিক হবার আহ্বান জানান।

এখন বিদ্রোহীদের সমর্থনদাতা যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বানে রাশিয়া সাড়া দেবে কিনা অথবা দিলেও ঠিক কোন কৌশলে তারা এগোয়, সে হিসাব কষতে বসেছেন সংবাদকর্মী ও যুদ্ধবিশ্লেষকরা। এই হিসাব-নিকাশের মধ্যেই আশাবাদী হয়ে আবারও সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণবাহী বহর পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতিসংঘ।

Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali
Managing Director: Akbar Hossain
Executive Editor: Mehedi Hasan
E-mail : abnanewsusa@gmail.com
Usa Office: 289 West Koach Avenue, Egg harbor City, New Jersey-08215, Bangladesh Office : 60/1. Purana Paltan (2nd Floor), Dhaka-1000, Usa. Phone: +16094649559, Cell:+8801711040113, +8801912-621573
Server mannarged BY PopularServer
Design & Developed BY PopularITLimited