এবিএনএ : চোখে মুখে আনন্দ ও চঞ্চলতা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন সিলেটে ছাত্রলীগ নেতার চাপাতি হামলায় আহত কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। চিকিৎসা শেষে পরিবারের মাঝে, মায়ের বুকে ফিরে যাবার আনন্দ ও তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্ততদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে।
তিন মাস চিকিৎসা শেষে বাড়ি যাবার আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় খাদিজাকে হাজির করা হলো মিডিয়ার সামনে। আকাশি ও গাঢ় নীল প্রিন্টের কামিজ ও স্কার্ফ পরে তার কেবিন থেকে চিকিসৎকদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে উৎফুল্ল খাদিজা আসলেন সি আর পির রেড ওয়ে হলে। এ সময় খাদিজার সঙ্গে তার চাচি লিজা আখতার ও ভাই শাহিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। কাল শুক্রবার তিনি চলে যাবেন সিলেটে। চিকিৎসকদের কিছুটা বিধিনিষেধ থাকলেও ৪৫ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনে খোলামেলা কথা বললেন খাদিজা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকল মহল ও গণমাধ্যম কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। খাদিজা বলেন, তিনি এখন অতীতকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তিনি একজন ব্যাংকার হতে চান বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। চিকিৎসকরা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে তিনি সিলেটের আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারবেন। তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি তার ওপর বর্ববরচিত হামলার সব খবর পড়েছেন এবং ধারণকৃত ভিডিওর দৃশ্য দেখেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসকরা জনানা, যদিও খাদিজা এখন স্বাভাবিকভাবে পড়তে ও লিখতে পারছেন তবুও তাকে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরো ৪/৫ বছর লেগে যেতে পারে । চিকিৎসকরা জানান, সিটি স্ক্যানে তার ব্রেইনে একটি ছোট সিস্ট দেখা গেছে। এজন্য তাকে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। বর্তমানে তাকে সিলেটের সিআরপি শাখার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে। তবে সাভার সিআরপি তার সকল বিষয় সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিআরপি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিসেস উইং এর প্রধান ডাঃ সাইদ উদ্দিন হেলাল, প্রশাসন প্রধান মোঃ শহিদুর রহমান, খাদিজা ও তার পরিবার, খাদিজার সকল থেরাপিস্ট, কাউন্সেলর। গত বছরের অক্টোবরে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা প্রেম প্রত্যাখান করায় চাপাতি দিয়ে তার ওপর হামলা করে। এর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে এ সংবাদ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। খাদিজাকে গুরুতর অবস্থায় সিলেটের ওসমানী হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়।
সেখানে প্রায় ২ মাস বেশ কয়েকটি অপারেশনের পর তাকে পুনর্বাসনের জন্য সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সিআরপি’র মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম খাদিজাকে পর্যবেক্ষণের পর ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনালথেরাপিস্ট এবং কাউন্সেলরদের নিয়ে আট সদস্যের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। এই টিম খাদিজার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তিন মাসের চিকিৎসা পরিকল্পনা করে।
অবশেষে চিকিৎসার পর কাল নিজ বাড়ি সিলেটে যাচ্ছেন খাদিজা।