জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

মাদক চক্রের হোতা না ধরলে লাভ নেই: বার্নিকাট

এবিএনএ : মাদকবিরোধী লড়াইয়ে সরবরাহকারীদের পাশাপাশি তাদের যারা মদদ দেয় এবং এই কারবার যারা নিয়ন্ত্রণ করে সেই হোতাদের ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জরুরি যে মানবাধিকার অক্ষুণ্ন রেখে সঠিক মানুষকে ধরা হচ্ছে এবং সঠিক মানুষ সাজা পাচ্ছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ১২০ জনেরও বেশি প্রাণ হারানোর প্রেক্ষিতে বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে বার্নিকাট জানান, অনেক দিন ধরে মন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয় না এবং আজকের আলোচনায় অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে। তবে মাদকবিরোধী অভিযান এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত। জানান, আলোচনায় বেশি কথা হয়েছে মাদকবিরোধী সাম্প্রতিক অভিযান নিয়েই। মাদকবিরোধী অভিযানে প্রাণহানি উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। বার্নিকাট বলেন, ‘আমি অবশ্যই মাদকবিরোধী লড়াইয়ে বিপুল মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। গুলিতে নিহত মানুষের সংখ্যাটি ১২২ জনে দাঁড়িয়েছে।’ ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবাইকে নিজেকে রক্ষার জন্য অধিকার দিতে হবে। তবে সংঘর্ষ হলে সেখানে তারা প্রাণ হারাতে পারে।’ ‘আমি বরাবরের মতো বলেছি মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে হবে যেন মানুষ আস্থা পায় যে সঠিক ব্যক্তিকে ধরা হচ্ছে, সঠিক ব্যক্তি সাজা পাচ্ছে।’

হোতাকে না ধরে পরিবেশক ধরে লাভ নেই

মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে বার্নিকাট বলেন, ‘এখানে দুইটি বিষয় জড়িত আছে। মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে পরিবেশকদের এই রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া। তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেবল পরিবেশক নয়, পেছনের হোতাদেরকে ধরে বিচারের মুখোমুখি করা।’ ‘কারণ একজন পরিবেশনকে আপনি সরিয়ে দেবেন, সঙ্গে সঙ্গে ১০ জন নতুন ১০ জন চলে আসবেন। কাজেই যারা মাদকের কারবারের কেন্দ্রে রয়েছে, যারা মাদকের কারবারে মদদ দিচ্ছে তাদেরকে খুঁজে বের করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ “আমেরিকার প্রখ্যাত রাজনীতিক জেসন জ্যাকসন বলেছেন, ‘টাকা অনুসরণ করতে থাকুন, আপনি উৎসে পৌঁছে যাবেন’।” বার্নিকাট দ্বিতীয় যে উপায়টির কথা বলেন, তা হলো: মাদকের চাহিদা কমনো। বলেন, ‘আসক্ত মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে। মানুষ যদি মাদক কিনতে না চায়, তাহলে পরিবেশকরা বিক্রি করতে পারবে না।’ আর মাদকের চাহিদা কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের পরামর্শ এমন: ‘শিশুদেরকে যথাযথ শিক্ষা দিতে হবে। আর যারা এরই মধ্যে মাদকে আসক্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই পথ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।’

মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র

বার্নিকাট বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যারা মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না। এটা মানুষকে মেরে ফেলছে, পরিবারকে ধ্বংস করছে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। ‘প্রতিনিয়ত নির্দোষ মানুষ মাদকে জড়িয়ে দিয়ে অপরাধেও সম্পৃক্ত হচ্ছে। কিন্তু আমি যতদূর জানি, পৃথিবীতে কোনো দেশ মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর পন্থা বের করতে পারেনি।’ অন্য এক প্রশ্নে বার্নিকাট জানান, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। কারণ, ‘মাদক কারবারিদের প্রতি সহনশীলতা দেখালে নির্দোষদেরকেই অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।’ ‘এ ক্ষেত্রে শূন্য সহনশলীতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও কথা বলেন বার্নিকাট। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে যাবেন। বলেন, ‘এটা কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় না, মানবতার প্রশ্ন।’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button