পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাব জব্দ করবে এনবিআর!

এবিএনএ : আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো (আইওসি) থেকে গ্যাস কিনে গ্রাহকের কাছে সরবরাহের বদলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়ের পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা পরিশোধ করছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এনবিআর থেকে পাওনা পরিশোধে বারবার তলব করা হলেও এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা দেখাচ্ছে না সরকারি সংস্থাটি। এ কারণে অর্থ আদায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর।
পেট্রোবাংলার কাছে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা (সুদসহ ৩৩ হাজার কোটি টাকা) বকেয়া পড়ে আছে এনবিআরের। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের বকেয়া দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। তখন সুদ ছাড়া ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে এনবিআরকে পরিশোধের করবে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। কিন্তু সে কথা রাখেনি সংস্থাটি। এরপর ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ভ্যাট বাবদ পাওনা জমা হয় পেট্রোবাংলার। আর এখন পর্যন্ত এ অংক ছুঁয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকায়।
এনবিআরের ওই সূত্রটি জানায়, আইওসির কাছ থেকে গ্যাস কেনার সময় কোনো ভ্যাট বা সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। কিন্তু সেই গ্যাস সরবরাহের সময় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়।
সূত্রটির বক্তব্য, গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে বকেয়া অর্থ জমা দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা।
আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আইওসি থেকে গ্যাস বেশি দামে কিনতে হয় বলে সেটা পুষিয়ে নিতে হয় ভর্তুকি দিয়ে। আইওসি’র কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে হয় প্রায় ৩ টাকা ১০ পয়সায়। যেখানে পেট্রোবাংলা ১ টাকা ৬ পয়সা করে দিলেও ঘাটতি থেকে যায় প্রায় ২ টাকা ৩ পয়সা। আর দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত গ্যাস ও আইওসি গ্যাসের ওপর সমানভাবে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ও মূসকসহ অন্যান্য চার্জ যোগ করে তা বিক্রি করা হয় প্রতি ঘনমিটার গড়ে ৬ টাকা ৩৮ পয়সায়। ফলে আইওসি থেকে বেশি দামে যে গ্যাস কেনা হয়, গ্রাহকের কাছে বিক্রির সময় তা মিটিয়ে আরও বিপুল অংকের অর্থ জমা পড়ে পেট্রোবাংলার কোষাগারে। এ হিসাবে বলা যায়, লোকসানের চেয়ে পেট্রোবাংলার লাভই রয়েছে বেশি।
যোগাযোগ করলে গ্যাস কেনা-বেচার হিসাবের পার্থক্য তুলে ধরেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মো. তৌহিদ হাসনাত খান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর (আইওসি) কাছ থেকে আমরা যে দামে গ্যাস কিনি, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করি।
তিনি এনবিআরে বকেয়ার বিষয়ে বলেন, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের অর্থ আদায় করার পর আমরা আইওসি কোম্পানিকে অর্থ শোধ করি। কারণ তারা আমাদের জন্য প্রায় ৪৮ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করে। অর্থ যদি আমরা পরিশোধ না করি, তাহলে তারা গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে। আর গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করলে আমাদের বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে। এই মুহূর্তে এনবিআরের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার মতো কোনো অর্থ নেই পেট্রোবাংলার।
ফলে রাজস্ব বোর্ড পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেও কিছুই করার নেই বলে জানিয়ে দেন তৌহিদ হাসনাত খান।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান রাজস্ব না দিলে এনবিআরের কমিশনারদের সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আইনি ক্ষমতা আছে। সরকারের রাজস্ব দীর্ঘদিন বকেয়া থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে আদায় করতে পারেন কমিশনাররা। এছাড়া দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও বেশি গতিশীল করতে যেসব প্রতিষ্ঠানে বকেয়া রাজস্ব পড়ে আছে সেগুলো আদায় করা প্রয়োজন। নতুবা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়তে হবে আমাদের।
পেট্রোবাংলার বকেয়া দিনদিন বাড়ছে উল্লেখ তিনি বলেন, সর্বশেষ বকেয়া অর্থ পরিশোধে গত মাসে অর্থ সচিবের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক সুদ ছাড়া অর্থ পরিশোধের কথা জানানো হয়েছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে বারবার অর্থ পরিশোধের কথা বলা হলেও তারা বিষয়টিতে কর্ণপাত করছে না। সেজন্য রাজস্ব আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
Share this content: