আইন ও আদালতলিড নিউজ

‘কোন যুক্তিতে লিভ গ্রহণ করেছেন জানতে চাই’

এবিএনএ : বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে আপিল বিভাগের আদেশের দিনও বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা আদালতের সঙ্গে নানা তর্ক-বিতর্ক করেছেন। আর তাদের বক্তব্যের পর ২২ মে থেকে এগিয়ে ৮ মে শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় আপিল বিভাগ। সোমবার বেলা ৯টা ১৯ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদিন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। এরপর কার্যতালিকায় থাকা এক মামলার শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেন বিচারপতিরা। প্রথমে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আপিলের আবেদন গ্রহণ করে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ ২২ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগ। আর আপিল শুনানির জন্য মামলার সারসংক্ষেপ (নথিপত্র) চার সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মামলার মামলার সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয় দুই সপ্তাহের মধ্যে। পাশাপাশি চার সপ্তাহ পরে আপিলটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ থাকবে বলে জানান আদালত।

আদেশের পর আপিল বিভাগ তার কার্যতালিকায় থাকা অন্য মামালার শুনানি শুরু করে। কিছু সময় পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি দুঃখিত। আপনি কী আদেশ দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারিনি।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মত হয়ে এ আদেশ দিয়েছি।’ জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমি সর্বসম্মত, এটা জানতে চাইনি। কোন যুক্তিতে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করেছেন সেটা জানতে চাই।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নথি পর্যালোচনা করেছি।’ জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা তো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তুতে শুনানি করিনি) বলিনি।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপিলে বলতে পারবেন।’ জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন শিরোধার্য্য। তবে ২২ মে অনেক দূর। আজকে যেভাবে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এই জাতীয় ক্ষেত্রে কোনো দিন লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা হয়নি।’ ‘তাহলে তো সবই (অতীতের সব মামলায়) লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা উচিত ছিল।’

এরপর প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে দিতে নির্দেশ দেন।এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। ২২ মে তারিখের ওই সময়টা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি।’এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকার যে উদ্দেশ্যে এটা করেছে। দুদক আর সরকারতো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে, দূরে রাখতে চায়।’ এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সময়টা কমিয়ে দেন। এপ্রিলে করে দেন।’ তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘তখন তো ভ্যাকেশন (সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি)।’ মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘ভ্যাকেশনের আগে দেন।’ বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন।’ জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন হলে, দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকল।’ তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত থাকার পাশাপাশি ওইদিন আপিল শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টের দেয়া খালেদা জিয়ার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। গত ‍বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্র ও দুদক।

গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন দুই বিচারক। পেপারবুক প্রস্তুত হলে উভয়পক্ষ (দুদক-খালেদা) আপিল শুনানির জন্য মেনশন করেতে পারবে বলেও আদেশ দেয়া হয়। আদেশের কপি পরদিন মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পৌঁছায়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জামিননামা দাখিল করার পর জামিনের আদেশের কপি কারাগারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদক। পরে তা পাঠানো হয় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে। ১৪ মার্চ শুনানি করে আপিল বিভাগ ১৮ মার্চ শুনানির দিন নির্ধারণ করে জামিন স্থগিত করে। আর সেদিন শুনানি করে আজ আদেশ দেয়ার সময় নির্ধারিত হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ওই দিন থেকেই তিনি পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ২২ ফেব্রুয়ারি করা হয় জামিন আদেবন। ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির পর ১২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রধানকে জামিনের আদেশ দেয় হাইকোর্ট।

Share this content:

Related Articles

Back to top button