জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

এখন সংসদে হাস্যরসের বদলে চরিত্রহনন করা হচ্ছে : ইনু

এবিএনএ : সংসদে হাস্যরসের বদলে, শৃঙ্খলার বদলে এখন চরিত্রহনন বেশি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আজ  বুধবার জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘সাংস্কৃতিক ঘাটতি ও প্রগতির অন্ধকার’ শীর্ষক গণবক্তৃতায় মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরের সংসদ অধিবেশন দেখুন, সেখানে হাস্যরস ছিলো। যখন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ স্পিকার ছিলেন, তখনো অনেক হাস্যরস হতো, তিনি নিজেও অংশ নিতেন। এখন সেটা নেই। বরং এখন সংসদে চরিত্রহনন হয় বেশি।

ইনু বলেন, একটা দেশের অগ্রগতিতে অনেকগুলো ঘাটতি এসে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশও তার অগ্রগতিতে গত ১০০ বছরে সবকিছু ধরে রাখতে পারেনি। সামরিক স্বৈরতন্ত্র থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্রের দিকে হাঁটছে দেশ। এখানে যে ঘাটতি হবে তা পূরণ সম্ভব। অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণ করা যায়, তবে সাংস্কৃতিক ঘাটতি অপূরণীয়। ফলে গণতন্ত্র আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সংস্কৃতিকেও সমান্তরালে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাসের ঘাটতি রয়েছে। ফলে আমরা ৫২’র ভাষা শহীদদের নিয়ে যেভাবে আলোচনা করেছি, ৪৮ এ রাষ্ট্রভাষার জন্য বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক প্রয়াস বা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে ততোটা আলোচনা করিনি। অথচ ধীরেন্দ্রনাথই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ মানে শুধু সেক্টর কমান্ডার বা বীরশ্রেষ্ঠ, উত্তমরা নন- তৎকালীন রাজনীতিবিদরা, যারা তখন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই বিষয়গুলোরও ইতিহাসে ঘাটতি রয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, রবীন্দ্রনাথকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, কাজী নজরুল ইসলামকে খণ্ডাকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। উর্দু আর ফারসির মোড়কে বাংলা ভাষাকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার বিষয় আর চর্চা না থাকলে বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়।

এ সময় সংস্কৃতির তিনটি জায়গায় ঘাটতির কথা তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। সেগুলো হলো অর্জনের ঘাটতি, অর্জন ধরে না রেখে পিছিয়ে যাওয়া এবং অর্জনে বন্ধ্যাত্ব। নারী, শিশু, আদিবাসীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

বর্তমানে রাষ্ট্রের সব স্তরে সংস্কৃতির ঘাটতির উদাহরণ দিতে গিয়ে ইনু বলেন, শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেয়ে আমরা শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারি না। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা হুড়োহুড়ি করেন। বিভিন্ন দলের নেতারা অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন। নাগরিক শৃঙ্খলা বোধের অভাব দেখা যায়।

তিনি এও যোগ করেন,’পহেলা বৈশাখ, ২১শে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ঈদ, পূজাসহ বাঙালির ৭টি উৎসব রয়েছে। এগুলোকে ধর্মীয় মোড়ক দেওয়া যাবে না, এগুলো সার্বজনীন। তেমনি কপালে লাল টিপ দেওয়া বা ঘোমটা দেওয়া ধর্ম দিয়ে বিচার করলে হবে না। এটা বাঙালির সংস্কৃতি। ‘

এ ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা এখন ক্ষমতার সঙ্গে লেনদেন করেন। শিক্ষকরা জাসদ করলে যেমন জাসদের নেতাকে তেলবাজি করার দরকার নেই, তেমনি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে উপাচার্যরা যেয়ে বসে থাকলে সেটি বেমানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যেতেন পরামর্শ নিতে। এখন শিক্ষকরা পার্টি অফিসে যাচ্ছেন তেলবাজি করতে। বিচারপতিরা যখন বসে থাকেন আর নেতারা বক্তব্য দেন, সেটা বড় বেমানান মনে হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক করার ওপর জোর দেন তিনি।

গণবক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

Share this content:

Back to top button