

এবিএনএ: শুরু থেকেই প্রবল আপত্তি ও তীব্র সমালোচনা ছিল। কিন্তু সব আপত্তি-সমালোচনা ঠেলে সরিয়ে মেক্সিকো দেয়াল নির্মাণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, “সীমান্ত দিয়ে মাদক, চোরাচালান চক্র, মানব পাচারকারী আর অবৈধ অভিবাসীদের ‘আগ্রাসন’ চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই ‘আগ্রাসন’ চিরতরে বন্ধ করতেই দরকার দেয়াল। আর যত দ্রুত সম্ভব দেয়াল তৈরির জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা ভালো কাজ করবে।” কিন্তু পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে দেয়ালের নামে কোটি কোটি ডলার উড়াতেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে সাংবাদিকদের সামনে জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। এর ফলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই দেয়ালের জন্য রফা হওয়া অর্থের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট তার নিজস্ব নির্বাহী ক্ষমতাবলে প্রতিরক্ষা খাতের অর্থও নিতে পারেন। শনিবার এএফপি, দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ট্রাম্পের ভাষণ এদিন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এক নাগাড়ে ৫০ মিনিট কথা বলেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘জরুরি অবস্থার ঘোষণাপত্রে সই করতে যাচ্ছি। এর আগেও এমন হয়েছে।
১৯৭৭ সালের পর থেকে অন্য প্রেসিডেন্টরাও এমন সই করেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ মাথাও ঘামায়নি। মনে হয়, সে বারের ঘটনাগুলো তেমন উত্তেজক ছিল না!’ গত দুই বছরেও দেয়াল নির্মাণ কেন হয়নি সেই ব্যর্থতা স্বীকার করে ট্রাম্প দাবি করেন, আরও আগেই দেয়াল হয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি তখন একেবারেই নতুন ছিলাম।’ পয়েন্টের পর পয়েন্ট বলতে গিয়ে এক জায়গায় তিনি বলেন, ‘লোকে বলে ট্রাম্প নাকি পাগল।’ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেন, আমাদের সম্পর্ক এখন কোথায়। তার সঙ্গে এখন আমার খুব ভালো সম্পর্ক।’ দেয়াল নির্মাণে ২৩০ কোটি ডলার অতিরিক্ত খরচ : দেয়াল নির্মাণে ৫৭০ কোটি ডলার চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু দর কষাকষি করে শেষমেশ ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে রফা হয়েছিল কংগ্রেসে। কিন্তু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে অন্যান্য উৎস থেকে দেয়াল নির্মাণের জন্য এখন ৮০০ কোটি ডলার গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। এই অর্থ কংগ্রেসে তার প্রস্তাবিত অর্থের চেয়ে ২৩০ কোটি ডলার বেশি। যে যে খাত থেকে অর্থায়ন হবে : হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেয়াল নির্মাণে বাকি অর্থ প্রতিরক্ষা বিভাগের কয়েকটি উৎস থেকে গ্রহণ করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই অর্থ পেতে এখন নিজের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করবেন তিনি। কংগ্রেস অনুমোদিত ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রদান করবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। তবে এ অর্থ সরাসরি দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা যাবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাদক নিরোধ তহবিল থেকে ৬০ কোটি ডলার, যেটা আসবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বলে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদক প্রতিরোধ কর্মসূচি থেকে ২৫০ কোটি ডলার যা নির্বাহী আদেশ বলে অর্থায়ন হবে। এছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামরিক নির্মাণ বাজেট থেকে আরও ৩৫০ কোটি ডলার। এটাও আসবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে। দেয়াল নির্মাণ করবে যারা : দেয়াল নির্মাণের কাজটি মার্কিন সেনাবাহিনী করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় ইতিমধ্যে পেন্টাগন ৪ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এছাড়া প্রায় ২ হাজার ১০০ সীমান্তপ্রহরী সীমান্ত প্রহরায় নিযুক্ত রয়েছে। সেনাবাহিনী সাধারণত তারকাঁটা দেয়ার কাজগুলো করে থাকে। তবে দেয়াল নির্মাণের মতো ভারি কাজগুলো সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্যরাই করে থাকে।জরুরি অবস্থায় সাংবিধানিক সংঘাত : ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে কঠোর নিন্দার মুখে পড়েছে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে মার্কিন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন তারা। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লস শুমার যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের জরুরি অবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’, ‘ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সহজে পার পেয়ে যাবেন না তিনি। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলা করবে ডেমোক্র্যাটরা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। আর এ চ্যালেঞ্জ জানাবেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারাই। এরই মধ্যে তারা আইনি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। মামলা ঠুকে দিতে পারেন সহায়-সম্পদ ও জমি অধিগ্রহণের ঝুকিতে মেক্সিকো সীমান্তের মার্কিন অধিবাসীরাও। ইতিমধ্যে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ও কয়েকটি আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান। তাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিরেকে দেয়াল নির্মাণ চেষ্টা ‘মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতা বানচালে ভোটাভুটিতেও যেতে পারে বিরোধীরা। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে দেয়াল নির্মাণে অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ পেতে ট্রাম্প নিজের নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্প যাতে এ ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারেন সে লক্ষ্যে কংগ্রেসে ভোটাভুটিতে যাওয়ার একটা প্রবল আকাক্সক্ষা ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও। শেষ পর্যন্ত তারা সফল না হলেও পরিস্থিতিটা খুবই বিব্রতকর হবে ট্রাম্পের। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণায় ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহারে ইতিমধ্যে কঠোর সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও দুই রিপাবলিকান সিনেটর মারকো রুবিও ও সিনেটর র্যান্ড পল। ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতাকে র্যান্ড পল ‘অসাংবিধানিক ও বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন কিনা আরেকবার ভাবতে বাধ্য করবে রিপাবলিকান অন্যান্য আইনপ্রণেতাদের। পরিস্থিতি এমনও হতে পারে, ট্রাম্প নিজে থেকেই তুলে নিতে পারেন জরুরি অবস্থা। তা না হলেও এ ভোটাভুটি আগামীতে যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।