সাগরের তলদেশে আধিপত্যের লড়াই: কে এগিয়ে—যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া?
পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিন মোতায়েনে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার উত্তেজনা চরমে, আধুনিক সমরপ্রযুক্তিতে কে কত শক্তিশালী?


এবিএনএ: পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিন নিয়ে আবারও উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী পুরনো কৌশলকে আবার ফিরিয়ে আনছে দুই পরাশক্তি। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের মন্তব্যের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন কৌশলগত অবস্থানে মোতায়েন করেছে।
এই পদক্ষেপকে ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। কারণ, মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ‘ডেড হ্যান্ড’ নামের একটি পারমাণবিক প্রতিশোধমূলক কৌশলের ইঙ্গিত দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার অর্থনীতিকে “মৃত অর্থনীতি” বলে আখ্যা দেন এবং পরমাণুবাহী সাবমেরিন পাঠানোর নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন শক্তি:
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও-ক্লাস সাবমেরিন, যাদের ‘বুমার’ বলা হয়, পারমাণবিক হামলার নির্ভুলতা ও দীর্ঘস্থায়ীতার জন্য বিখ্যাত। এদের প্রত্যেকটি ২০টি ট্রাইডেন্ট ডি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এবং প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বড় ধরনের মেরামত ছাড়াই টহলে সক্ষম।
তাছাড়া, ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিওউল্ফ-ক্লাস ও লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিনগুলোও আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এদের মধ্যে ভার্জিনিয়া-ক্লাস হলো নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক প্ল্যাটফর্ম, যা টর্পেডো, টমাহক ও হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করে।
রাশিয়ার সাবমেরিন বাহিনী:
রাশিয়ার আছে প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন, যার মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বোরেই-ক্লাস সবচেয়ে আধুনিক, যা ১৬টি বুলাভা মিসাইল ও ৬টি টর্পেডো লঞ্চার বহনে সক্ষম।
ডেলটা ৪-ক্লাস সাবমেরিন এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং এসবই সমুদ্রের নিচে রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড। আক্রমণাত্মক সাবমেরিনগুলোর মধ্যে ইয়াসেন-ক্লাস সবচেয়ে আধুনিক, যা ছোট আকারে হলেও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
বিশ্ব রাজনীতিতে উদ্বেগ:
সাবমেরিন মোতায়েন এখন আর শুধু সামরিক মহড়ার বিষয় নয়—বরং এটি বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রতিযোগিতার নামে ভবিষ্যৎ পৃথিবী এক অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামরিক আধিপত্যের এই লড়াই এখন সমুদ্রের গাঢ় অন্ধকারেও বিস্তৃত।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যতই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করুক, ততই বাড়ছে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি। দুই পরাশক্তির এই অদৃশ্য যুদ্ধে গোটা বিশ্বকেই প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে এক অনিশ্চিত পরিণতির জন্য।