আন্তর্জাতিক

কারাদণ্ড পেলেন এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোলু, উত্তাল তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ

সরকারি কর্মকর্তাকে অপমান ও হুমকির অভিযোগে ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোলুর এক বছর আট মাসের কারাদণ্ড, রাস্তায় নেমেছে হাজারো জনতা

এবিএনএ:  তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে তোলপাড় তৈরি করেছেন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলু। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত এই নেতা এক সরকারি কর্মকর্তাকে অপমান ও হুমকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আদালত তাকে এক বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেন।

এই রায় ঘোষণার পর থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। অনেকে মনে করছেন, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং এর মাধ্যমে বিরোধী কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

২০২৫ সালের মার্চে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই ইমামোলু কারাগারে আছেন। কিন্তু মামলার সূত্রপাত আরও আগে—২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় তিনি প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আকিন গুরলেকের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি গুরলেককে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেন।

এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই মামলা, তারপর গ্রেপ্তার এবং অবশেষে আদালতের রায়। যদিও ইমামোলুর আইনজীবীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

ইস্তাম্বুলের রাস্তায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ দেখা গেছে এই রায়ের পর। বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ইমামোলুর স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোলুও। বিক্ষোভে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “এরদোয়ানের সময় শেষ। এই অন্যায়ের জবাব দেশের জনগণ দেবে।”

ইমামোলু বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-এর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৮ সালে হওয়ার কথা, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এর আগেও নির্বাচন এগিয়ে আনা হতে পারে।

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইমামোলু ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।”

২০১৯ সালে ইমামোলু প্রথমবার ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন এবং গত বছর পুনর্নির্বাচিত হন ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে। গ্রেপ্তারের পর জেল থেকেই এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “জনগণ এরদোয়ানকে বার্তা দিয়েছে—এই অন্যায় আর বরদাশত নয়।”

এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো, তুরস্কে বিরোধী রাজনীতিবিদদের জন্য কতটা কঠিন হয়ে উঠছে অবস্থান। এখন পুরো বিশ্বের নজর থাকছে তুরস্কের রাজপথ ও আদালতপাড়ার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button