এবিএনএ: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এ মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর করিম এ খান সৌজন্য সাক্ষাৎ আসেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এছাড়াও তারা রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনের সময় নৃশংসতার বিচার ও জবাবদিহিতা নিয়েও আলোচনা করেন। আইসিসি’র চিফ প্রসিকিউটর করিম এ খান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, মিয়ানমার সামরিক সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে আইসিসি অফিস রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে।
করিম খান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের আহ্বানকে সমর্থন করেন। এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদও ২০২৫ সালে এই সম্মেলন আয়োজনের সম্মতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক সকল অংশীজনকে একত্রে বসিয়ে সংকট, বিশেষত বাংলাদেশে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা এবং তাদের শিশুদের দুর্দশার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে সহায়তা করবে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিষণ্ণতার মাঝে ডুবে থাকা তরুণদের বিষয়ে ইউনূস বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এটি যেন বিস্ফোরিত না হয়।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা ও একে সুরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সুরক্ষিত অঞ্চল বাস্তুচ্যুত মানুষকে সহায়তা এবং চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর হবে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা জাতিসংঘ দ্বারা নিশ্চিত করা উচিত। যখন লড়াই বন্ধ হবে, এই সুরক্ষিত অঞ্চলে থাকা মানুষ সহজেই তাদের নিজ নিজ স্থানে ফিরে যেতে পারবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইসিসিতে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনবে, যা তার প্রায় ১৬ বছরের দীর্ঘ শাসনকালে জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনের সময়ের হত্যাকাণ্ড এবং হাজার হাজার গুমের ঘটনা অন্তর্ভুক্ত।’
আইসিসি চিফ প্রসিকিউটর জানান, তারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করতে চান। এই আদালত শেখ হাসিনা এবং তার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এ সময় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আইসিসি প্রতিষ্ঠার জন্য রোম সংবিধি স্বাক্ষরকারী প্রথম এশীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং আমরা আগামী দিনগুলোতে আমাদের সহযোগিতা আরও গভীরভাবে করার অপেক্ষায় আছি।’
