বাংলাদেশলিড নিউজশিক্ষা

গেজেট না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কোনো রকম নিপীড়ন চালানো হলে তাদের রক্ষা করতে আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবো। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সাধারণ ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা বাংলার ছাত্রসমাজ তার সাথে আছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করি অতি দ্রুতই তার (প্রধানমন্ত্রী) ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে। আমরা দাবি করব, ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর লিখিত বক্তব্যে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে, কর্মূসচির মধ্যে গ্রেপ্তার আন্দোলনকারীদের সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনায় যেসব মামলা করেছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে, ‘পুলিশি নির্যাতনে’ আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে হবে এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের যাতে পরবর্তীতে কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্ত্বর হয়ে পুনরায় রাজু ভাস্কর্য হয়ে মধুর ক্যান্টিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাই থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘আমি মনে করি কোটা ব্যবস্থা থাকলে এরকম আন্দোলন বারবার হবে। কাজেই কোটা থাকারই দরকার নাই। কোটা না থাকলে সংস্কারের প্রশ্নও উঠবে না, আন্দোলনও হবে না। আন্দোলনের ঝামেলা মেটানোর জন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’ সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। এ পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরাদের দাবি, ১০ শতাংশের বেশি কোটায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে টানা আন্দোলন চললেও ৮ এপ্রিল তা সহিংস রূপ নেয়। এদিন শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসিতে অবস্থান নেন। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাতভর পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এসব সংঘর্ষ ও ভিসির বাসভবনে তাণ্ডবের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। পরদিন সকালেও ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলতে থাকে। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিকেলে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, তরুণদের দাবি যৌক্তিক হলে তা উপেক্ষা করা হবে না। আগামী মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সরকার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখবে।

‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। পরে সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রাজু ভাষ্কর্যে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে প্রতিনিধিদের এ বক্তব্যে তাৎক্ষণিক অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের একাংশ। আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। আন্দোলনে অংশগ্রণকারী এই অংশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে রাত ১০টার দিকে মঙ্গলবার সকালে পুনরায় আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দিয়ে ফিরে যান তারা। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের। এরই মধ্যে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া অংশটি সন্ধ্যায় আবার রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একসাথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে বুধবার সংসদে কোটা না রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলনে গেজেট না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

Share this content:

Related Articles

Back to top button