

এবিএনএ: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। এখন থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। পরিবর্তে শুধুমাত্র ই-মেইল বা ডাকযোগের মাধ্যমে ওষুধ ও পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠানোর অনুমতি থাকবে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক প্রতিবেদন পেশ করে। এতে উল্লেখ রয়েছে যে, চিকিৎসকদের মনোযোগ যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং রোগীরা যাতে সঠিক চিকিৎসাসেবা পান, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্রতিবেদনে সংক্ষিপ্ত ও মধ্যমেয়াদি ৩২টি সুপারিশের মধ্যে ২১ নম্বর সুপারিশে এ বিধিনিষেধের কথা বলা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, নতুনভাবে গঠিত ফুড, ড্রাগ ও আইভিডি-মেডিকেল ডিভাইস প্রশাসনের অধীনে তিনটি শাখা থাকবে—ওষুধ-টিকা-প্রসাধনী, আইভিডি ডিভাইস এবং নিরাপদ খাদ্য। প্রতি দুই বছর অন্তর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা পর্যালোচনা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাধ্যতামূলক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল মান নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক-ফার্মাসিউটিক্যাল সম্পর্ককে নৈতিক ও প্রভাবমুক্ত রাখতে বিশ্ব মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশনা অনুসরণ করে সুপারিশ করা হয়েছে, ওষুধের নমুনা, উপহার প্রদান, খাবার সরবরাহ এবং কোনো প্রকার র্যাফেল ড্র বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
মেডিকেল কনফারেন্স আয়োজনেও পরিবর্তন আসছে। বিএমইএসি অনুমোদিত সিপিডি ক্রেডিট ছাড়া কনফারেন্স করা যাবে না, আয়-ব্যয়ের হিসাব কর দপ্তর ও বিএমইএসিতে জমা দিতে হবে। কোম্পানিগুলো কেবল প্রদর্শনী এলাকাতেই প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে।
চিকিৎসকদের কোনো পেশাগত সংগঠনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি সদস্য হতে পারবে না। কোনো নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য বা ওষুধ থাকলে তা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নয়, বরং কেন্দ্রীয়ভাবে নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে গঠিত ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। এ কমিশনে রয়েছেন দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্যনীতিবিদরা।
স্বাস্থ্যখাতে এই ধরনের পদক্ষেপ চিকিৎসা সেবাকে আরও স্বচ্ছ, রোগীবান্ধব এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালনার পথ তৈরি করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Share this content: