জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে ‘রোডম্যাপ’ করতে চায় কুয়েত

এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে একটি রোডম্যাপ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কুয়েত সরকার পাঁচ বছরের একটি ‘রোডম্যাপ’ করতে চায়।

গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে হোটেল লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব তাৎপ‌র্যপূর্ণ বৈঠক। বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর অনেক দিনের পুরোনো সম্পর্ক। উনি মনে করেন, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ এবং কুয়েত একটা রোডম্যাপ তৈরি করবে। অ্যাকশনেবল প্রোগ্রাম তৈরি করবে। যাতে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়, পাওয়ারফুল হয় এবং তিনি বিভিন্ন রকম প্রজেক্ট হাতে নিতে চান।’

আব্দুল মোমেন জানান, কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটি বৈঠক হবে, সেখানে এই ‘রোডম্যাপ’ তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হবে। বাংলাদেশে কুয়েতের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কুয়েত ফান্ড থেকে অনেকগুলো প্রজেক্ট দেশে চালিয়েছি। আমরা আরও চাই এবং তারাও আগ্রহী।’

কুয়েত এবং বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কুয়েতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরে যিনি আমির হন, তিনি ঢাকায় এসে ওআইসি সম্মেলনে উনি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে কুয়েতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক।’ কুয়েতে বাংলাদেশের ২০ হাজার শান্তিরক্ষী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বহু লোক ওই দেশে কাজ করে। আমাদের লোকজনের প্রতি তারা যথেষ্ট ভালো। ওখানে বেতন দেয় না এমন অভিযোগ খুব কম পাওয়া যায়।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল হামাদ আল সাবাহর মধ্যে বৈঠকটি ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে ‘একটা মজবুত সম্পর্ক তৈরিতে’ ভূমিকা রাখবে। কুয়েত বাংলাদেশে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা হবে, তা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

বাংলাদেশে কুয়েতের অর্থায়নে পাঁচটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, আরও বড় বড় চাই। রিফাইনারি করার জন্য তাদের থেকে প্রাথমিক একটা প্রস্তাব এসেছে। ভবিষ্যতে এটা আরও সুনির্দিষ্ট হবে। তারা বলছে, আগামী পাঁচ বছর তারা একটা রোডম্যাপ করতে চায় এবং আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। আমাদের আলোচনা করতে হবে যে কী কী ক্ষেত্রে আমরা তাদের সাহায্য চাইব এবং তারা আজকে বলেছে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা আমাদের সাহায্য চায়।’ আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘তারা বলেছে, বাংলাদেশি ডিফেন্সের লোকেরা হাইলি প্রফেশনাল এবং তারা আশা করে… শুধু প্রফেশনাল না, বলেছে যে এদের মতো কাজের লোক খুব কম আছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একাধিক ক্ষেত্রে কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে বলে আমরা আশা করি।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কুয়েত ফান্ড বাংলাদেশে প্রথম দফায় ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিভিন্ন পৌরসভা এবং উপজেলার অবকাঠামো উন্নয়নে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দ্বিতীয় দফার যে ফান্ড, ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে, সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। প্রথম দফার যে ৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প, সেটার সবগুলো বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।’

কুয়েত সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ‘বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট’ এর ভূমিকার কথা তুলে ধরে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ইরাক যখন কুয়েত আক্রমণ করে, কুয়েতের বর্ডারে যে মাইনগুলো তখন ছিল, সেগুলো সরানো… যদিও কুয়েত সেনাবাহিনীর নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চূড়ান্তভাবে সেটাকে আরেকবার দেখেছে। তারপর এই এলাকাটাকে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে অংশগ্রহণ করেন। পরে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লফভেনের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের পরিচয় থাকার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে, শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করার ক্ষেত্রে পৃথিবী জুড়ে সুনাম রয়েছে স্তেফানের।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের কল্যাণে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) সামিয়া আঞ্জুম উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Back to top button