জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

রাষ্ট্রপতিকে ১০ জনের নাম দিল সার্চ কমিটি

এবিএনএ : নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দিয়েছে সার্চ কমিটি।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। বিকেল ৪টা থেকে পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান সার্চ কমিটির সদস্যরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠককালে রাষ্ট্রপতির হাতে ১০ জনের নামের তালিকা তুলে দেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।
বঙ্গভবনে বৈঠক শেষে বের হয়ে সার্চ কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, রাত ৯টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে সন্ধ্যায় সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো নাম বিবেচনায় নিয়ে এবং সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করেই ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, একইসঙ্গে সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনদের মতামতের সারসংক্ষেপ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে। ইসি গঠনের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার পাশাপাশি এই প্রতিবেদনও রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে দেওয়া হবে।
১০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে কি-না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠকের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী বুধবারের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে সার্চ কমিটি আশাবাদী।’
সার্চ কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে কমিটির পাঁচ সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক করেছে। প্রথম বৈঠকে কার্যপরিধি ঠিক করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে নাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২৫টি নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি এবং তৃতীয় বৈঠকে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ সোমবারের বৈঠকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
নতুন ইসি গঠনে পরামর্শ নিতে দুই দফায় ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছে সার্চ কমিটি। এই ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক হচ্ছেন—হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা ও আবু হেনা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, পুলিশের সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা হয় সার্চ কমিটিকে।
২০১২ সালে বর্তমান ইসি গঠনের আগে গঠিত সার্চ কমিটি ১০ জনের তালিকা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছে জমা দিয়ে জনসমক্ষে নাম প্রকাশ করেছিল। সে তালিকা থেকেই পাঁচজনকে ইসিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি।

উল্লেখ্য, বর্তমান সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও অন্য তিন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে যোগদান করায় কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। নতুন ইসির অধীনেই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button