খেলাধুলালিড নিউজ

শিরোপার লড়াই আজ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড

এবিএনএ : আইসিসি ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপে শিরোপার লড়াই আজ। এতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান রানার্স আপ নিউজিল্যান্ড। লন্ডনের বনেদি ক্রিকেট ময়দান লর্ডসে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায়।

গত ১১ জুলাই এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইয়ন মর্গানের দল। তার দুদিন আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের সাথে ১৮ রানের জয়ের সুবাদে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। ভারত ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় ইংল্যান্ডের চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলে ফাইনালে এসেছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে তিনবার (১৯৭৯, ১৯৮৭, ১৯৯২) ফাইনালে উঠলেও কখনো শিরোপার স্বাদ পায়নি ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের সাফল্য গত আসরে রানার্স আপ হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সুতরাং আজ যারাই জিতবে তারাই হবে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন। রোল অব অনারে আগের পাঁচ বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নামের পাশে যুক্ত হবে ক্রিকেট বিশ্বের নতুন সম্রাটের নাম। পাশাপাশি আজকের এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই শেষ হবে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দশটি দেশের চার বছরের প্রতীক্ষা। বিশ্বের আড়াইশ কোটি দর্শক টেলিভিশনে আজকের খেলা উপভোগ করবেন।

গত ৩০ মে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। টানা দেড় মাস জুড়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১১টি ভেনুতে রবিন লিগ ভিত্তিতে বাংলাদেশসহ দশটি দল পরস্পরের মুখোমুখি হয়। লিগের ৪৫টিসহ সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে এবার মোট ম্যাচের সংখ্যা ৪৮। তেমন বড় কোনো অর্জন না হলেও বিশ্বকাপে আগাগোড়াই আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ। নিজেদের নয় ম্যাচের মধ্যে সপ্তম ম্যাচ পর্যন্ত সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছিল মাশরাফির দল। দলকে এই পর্যায়ে আনতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় অষ্টম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বড় প্রতিপক্ষের সাথে দাপুটে জয় বাংলাদেশকে আরো সম্মানিত করেছে। এ দুই জয়ের পাশাপাশি আফগানিস্তানের সাথেও জিতেছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেলেও দারুণ লড়াই করেছে টাইগাররা।

১৯৮৩ সালের পর বিশ্বকাপে কখনো জেতেনি ইংল্যান্ড। গত ৩ জুলাই ডারহামে লিগ পর্যায়ে ১১৯ রানের জয়টি ছিল বিশ্বকাপে ৩৫ বছর পর কিউইদের বিপক্ষে ইংলিশদের জয়। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নয় ওডিআই ম্যাচের সাতটিতে ইংল্যান্ড জিতলেও সামগ্রিকভাবে এগিয়ে রয়েছে নিউজিল্যান্ডই। মুখোমুখি ৮৬ ওডিআই ম্যাচের ৪৩টিতে কিউইরা এবং ৪১টিতে ইংলিশরা জিতেছে। টাই হয়েছে দুটি ম্যাচ। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল ইংলিশরা। তবে কোনোবারই তাদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর আবার তাদের সামনে সুযোগ এসেছে ফাইনালে খেলার। ইংল্যান্ডের পুরুষরা বিশ্বকাপের স্বাদ না পেলেও নারী দল ২০১৭ বিশ্বকাপে ভারতকে ৯ রানে হারিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছিলেন।

লর্ডসে এর আগে দুবার ওডিআই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ম্যাচ দুটিতে কিউইরা জিতেছিল যথাক্রমে ৫১ রান ও ৫ উইকেটে। লর্ডসে এবারসহ মোট সাতটি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। আগের ছয় ম্যাচের চারটিতে জিতেছিল ইংল্যান্ডই। লিগ পর্যায়ে লর্ডসের আগের ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৪ রানে হেরেছিল ইয়ন মর্গানরা।

নিউজিল্যান্ডের তুলনায় ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এবার ব্যাট হাতে সাফল্য পেয়েছেন বেশি। তারা এক হাজার রান বেশি পেয়েছেন, ১০০টি বাউন্ডারি ও ৫৩টি ছক্কা বেশি মেরেছেন। ২০০৭ বিশ্বকাপের কথা বাদ দিলে গত পাঁচ বিশ্বকাপ ফাইনালের চারটিতেই হেরেছে টস জয়ী দল। ২০০৭ সালের ফাইনালে টস জিতে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। ফাইনালে আগে ব্যাট করা দল মাত্র একবারই ৩০০ রানের বেশি করতে পেরেছিল (অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯/২ ও ভারত, ২০০৩)। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করে জেতার রেকর্ডটি ভারতের। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৭৫ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ভারত জেতে ৬ উইকেটে (২৭৭/৬)।

এই বিশ্বকাপে এখনো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও আজ ঘুরে দাঁড়াতে পারেন নিউজিল্যান্ডের অন্যতম উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল। ২০১৩ সালে লর্ডসেই ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওডিআই ম্যাচটি খেলেন গাপটিল। ঐ ম্যাচে তার স্কোর ছিল অপরাজিত ১০৩। দুদিন পর সাউদাম্পটনে আরো এক সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি (অপরাজিত ১৮৯)। ফাইনালে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে পারেন দুই ইংলিশ বোলার জোফ্রা আর্চার ও মার্ক উড। তারা যথাক্রমে ১৯ ও ১৭ উইকেট শিকার করেছেন যা বিশ্বকাপে ইংলিশ বোলারদের রেকর্ড। এর আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন ইয়ান বোথাম (১৬ উইকেট ১৯৯২)। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ডট বলও করেছেন জোফ্রা (৩৩৮টি)। নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট করেছেন ৩২০টি ডট বল।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button