

এবিএনএ: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য কথা নানা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেন, ‘হয়ত তার (এসকে সিনহা) মাঝে এই ভয় আছে, দেশে ফিরলে মামলার সম্মুখীন হতে হবে।’মঙ্গলবার দুপুরে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে লিগ্যাল এইড অফিস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ও অ্যাপসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এসময় সিনহাকে আদালতের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। এসকে সিনহা যখন প্রধান বিচারপতি তখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা হয়। আর এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আইন, শাসন ব্যবস্থা, সংসদ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশে যান সিনহা। ১০ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন তিনি সিঙ্গাপুর দূতাবাস থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। সম্প্রতি সিনহা আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ভয় দেখিয়ে। আর বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন বলে জানান। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রার্থনা ও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘উনার (এসকে সিনহা) ইচ্ছাগুলো, উনার ব্রোকেন ড্রিমস উনি চরিতার্থ করতে পারেননি বলেই আহাজারি করছেন। সেসব বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ ‘উনার যে এই দেশের প্রতি কোনও আনুগত্যবোধ নেই, সেটাই বুঝা যাচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে, যেসব কথা উনি বলছেন সেসব কথা উনি আগে মানে দেশে থেকেও বলতে পারতেন। কিন্তু সেগুলো যেহেতু মিথ্যা সেজন্য তিনি সেসব কথা দেশের বাইরে গিয়ে বলছেন। এতে এটা পরিষ্কার হলো তিনি এসব কথা বলছেন বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য।’ পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন সাবেক মন্ত্রী তৃণমূল বিএনপি নামের একটি দলের সভাপতি নাজমুল হুদা। এসকে সিনহাকে ফিরিয়ে আনা হবে কি-না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আদালতের মাধ্যমে হবে। হয়ত তার তার মাঝে এই ভয় আছে যে, দেশে ফিরলে মামলাগুলোর সম্মুখীন হতে হবে।’
‘আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব দেখা হচ্ছে’
আরপিও সংশোধনীর জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আরপিও সংশোধনীর জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তা আমরা পেয়েছি। এগুলো দেখা হচ্ছে।’ ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর খসড়া বিল চূড়ান্ত করে ৩ সেপ্টেম্বর ভেটিংয়ের জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মন্ত্রিপরিষদের পরবর্তী বৈঠকে উত্থাপন’
রাষ্ট্রপতি ১২টি বিলে স্বাক্ষর করেছেন কিন্তু সেখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ছিলো না। তাহলে আইনটি সংশোধনী করা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্পাদক মন্ডলীর সুপারিশে মন্ত্রিপরিষদের আগামী বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন উত্থাপন করা হবে।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়।এরপর ‘বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি’আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচি দেয় সম্পাদক পরিষদ। পরে রাজপথে কর্মসূচিতে না নামার অনুরোধ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদকে চিঠ দেন তথ্যমন্ত্রী। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় সম্পাদক পরিষদ। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও টোল ফ্রি কলসেন্টার সার্ভিসের মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বলেন, ‘ঘরে বসে আইন সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি এক সময় স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে স্বপ্নের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। এর ফলে ঘরে বসেই মানুষ বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ লাভ করছেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উপরিচালক আবিদা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাছান, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক প্রমুখ।