আন্তর্জাতিক

পশ্চিবঙ্গের ১৮ জেলা দখল করেছে সেনাবাহিনী: মমতা

এবিএনএ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্য প্রশাসনের সদরদফতর ‘নবান্নে’ ২৪ ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছেন। তার দাবি, পশ্চিবঙ্গের ১৮ জেলা সেনাবাহিনীর দখলে চলে গেছে।এটি সেনা অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি। যতক্ষণ পর্যন্ত রাজ্যের সব জায়গায় থেকে সেনা সরিয়ে না নেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি এখানেই অবস্থান করবেন।

মমতা আরও দাবি করেন, তাকে না জানিয়েই পশিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। শুক্রবার এই নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা অভিযোগ করেন, ডানকুনি, পালসিট এবং মুর্শিদাবাদে টোল প্লাজায় গাড়ি থামিয়ে সেনা তল্লাশি চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছেন, নাকাল হচ্ছেন। এখানে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে নাকি? তবে কি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থার পাশাপাশি গোটা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হল? আমাদের নির্বাচিত সরকার। আমি সেনার হাতে ছেড়ে দেব না।’

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা তাদের রুটিন কর্মসূচি। কখনো যুদ্ধের পরিস্থিতি হলে রসদ ও খাবার পানি বিভিন্ন ছাউনিতে পৌঁছনোর জন্য প্রচুর মালবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জওয়ানরা কত গাড়ি নিতে সক্ষম, দু’দিন ধরে পূর্ব ভারতের সব রাজ্যে সমীক্ষার মাধ্যমে তারই হিসেবনিকেশ চলছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি আসাম, অরুণাচল, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম— সর্বত্রই একাধিক জায়গায় সেনার এই কর্মসূচি চলছে। প্রতিটি দলে ৫ থেকে ১০ জন নিরস্ত্র জওয়ান রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর দাবি, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে জানিয়েই তারা এই সমীক্ষা চালাচ্ছে। প্রথমে তারা ২৮ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে এই সমীক্ষা চালানোর অনুমতি নিয়েছিল। পরে পুলিশের অনুরোধেই সেই তারিখ পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর করা হয় বলে তারা জানায়।

যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে মমতার দাবি, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানায়নি। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, পুলিশ কমিশনার— সেনার দাবি খারিজ করেছেন প্রত্যেকেই।

মমতা বলেন, ‘মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কেরালা, ঝাড়খণ্ড— বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কোথাও সেনা নামানো হয়নি। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে। কেন? মানুষের কথা বলছি বলে? আজকেও অনেকে এটিএমে টাকা পায়নি।’

তার অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থেই সেনাকে ব্যবহার করছে কেন্দ্র। এমনকী নবান্নের সামনের (বিদ্যাসাগর সেতুর) টোল প্লাজাতেও সেনা নামানো হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর আরও বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার সেনাকে বলেছিলেন এখান থেকে সরে যেতে। কারণ এটা স্পর্শকাতর এলাকার মধ্যে পড়ে। কিন্তু তার পরেও তারা সরেনি।’

যদিও বৃহস্পতিবার মাঝরাত নাগাদ নবান্নের অদূরের টোল প্লাজা থেকে সরে যায় সেনার দলটি।

সেনাবাহিনীর বক্তব্য, ওই টোল প্লাজা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই তারা সেখান থেকে সরে গিয়েছে। আজ শুক্রবার ওই জওয়ানদের অন্য কোথাও মোতায়েন করা হবে।

কিন্তু এর পরেও দফতর ছাড়েননি মমতা। রাতে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।

মমতা তাকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ১৮টি জেলা সেনার ‘দখলে’ চলে গিয়েছে। এটি সেনা অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি। আগামিকাল জাতীয় রাজনীতিতে এ নিয়ে প্রতিবাদে তৃণমূলের পাশে থাকতে চলেছে কংগ্রেস। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সব রাজ্যকে রুখে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার সকালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার লোকসভায় বলেছেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক এবং কষ্টদায়ক। বিষয়টি মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে রুটিন কর্মসূচিতে নেমেছে সেনাবাহিনী। গত বছর উত্তর প্রদেশ এবং ঝাড়খান্ডে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সেনাবাহিনী এ রকম কার্যক্রমে অংশ নেয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গল এরিয়ার ভারপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সুনীল যাদব বলেন, ‘এই একই জায়গাগুলিত গত বছর ১৯-২১ নভেম্বর এই কর্মসূচি হয়েছিল। এ বার আমরা ২৬-২৮ নভেম্বর কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ২৮ তারিখ বনধ হওয়ায় কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে দিন বদল করা হয়। কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে এই জায়গাগুলি রেকিও করেছিলাম। চিঠি দেয়া হয়েছিল কলকাতা ও হাওড়া পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং এইচআরবিসিকেও।’

সূত্র: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা

Share this content:

Back to top button