এবিএনএ : অবশেষে খুলনা-মংলা রেল লাইন প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের রূপসা সেতুর অদূরে রেলব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প এলাকায় চলছে সয়েল টেস্টের কাজ।
অপরদিকে, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত শুরু হয়নি রেললাইন নির্মাণের কাজ। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর শিগগিরই জমি অধিগ্রহণ শুরু করা হবে। দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ জানালেন জেলা প্রশাসন। সেইসঙ্গে চলতি মাসে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলার গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর লবণচরার মাথাভাঙা এলাকায় খুলনা-মংলা রেলসেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন মেশিনসহ প্রয়োজনীয় মালামাল আনা হয়েছে। এখানে চলছে সয়েল টেস্টের কাজ। জমিতে এবং নদীর অভ্যন্তরে উভয় স্থানে কাজ চলছে।
রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজের সাব কন্ট্রাক্টর গৃহায়ন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার সাইদুর রহমান জানান, গত ৮ এপ্রিল প্রকল্প এলাকায় আসা হয়। আর ১৪ এপ্রিল থেকে সয়েল টেস্টের কাজ শুরু করা হয়েছে। রেলসেতু নির্মাণের জন্য রূপসা নদী এবং নদীর দুই পাড়ের ১৪৪টি স্থানে সয়েল টেস্ট করা হবে। ইতোমধ্যে ৮টি স্থানে সয়েল টেস্টের কাজ শেষ করা হয়েছে। আরও ৮টি স্থানে বোরিংয়ের কাজ চলছে। দেড় মাসের মধ্যে সয়েল টেস্টের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সময় আরও বেশি লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্রর কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার জোতিন্দ্র সিং জানান, ‘রেলসেতুর কাজ শুরু করা হয়েছে। আমাদের জনবল ও মালামাল আনা হচ্ছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’
প্রকল্পের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুর রহিম জানান, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে রূপসা নদীতে রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ব্রিজের জন্য ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্র সয়েল টেস্টের কাজ শুরু করেছেন। এরপর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রেললাইন নির্মাণের কাজে এখন আর কোনো বাধা নেই। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন খুলনা-বাগেরহাটের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূণ দেয়ার পর জেলা প্রশাসন রেলওয়ের কাছে জমি হস্তান্তর করবে। এরপর কাজ শুরু হবে। তবে, ফুলতলার দেড় কিলোমিটার এবং মংলা পোর্টের ৬ কিলোমিটার সর্বমোট সাড়ে ৭ কিলোমিটার সরকারি জমি রয়েছে। এই জমিতে কাজ শুরু করতে কোনো সমস্যা নেই। চলতি মাসে রেল লাইন নির্মাণের জন্য ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন প্রকল্প এলাকায় আসবে। রেলসেতুর পাশাপাশি অচিরেই রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান জানান, খুলনা-মংলা রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া রেললাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপত্র পাওয়া গেলে জমির মালিকদের ৬ ধারা নোটিশ প্রদান করা হবে। এরপর তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেল সেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। এ প্রকল্পে ৭৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। অধিগ্রহণের জন্য খুলনার ৪০১.২৭৯০২ একর, বাগেরহাটের ২৭৫.০২৫৭ একর ও মংলা কর্তৃপক্ষের ৭৩.৩৫৭ একর জমি প্রয়োজন হবে।
এদিকে, প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে রূপসা নদীর উপরে হযরত খানজাহান আলী সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাট ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২১ শতাংশ বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং ব্রিজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে।
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের ইরকন সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর ব্রিজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন অ্যান্ড টাব্র নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান।