ইরানে হামলার পেছনে নেতানিয়াহুর তিন লক্ষ্য
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তারা ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিচ্ছে’, যা ইরানে ‘মৌলিক পরিবর্তন’ ঘটাতে পারে।


এবিএনএ: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তারা ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিচ্ছে’, যা ইরানে ‘মৌলিক পরিবর্তন’ ঘটাতে পারে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তিনি বলেন, ইসরায়েল মূলত তিনটি প্রধান লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।
১. ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ অবসান,
২. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতার ধ্বংস,
৩. ‘সন্ত্রাসের অক্ষ’ নির্মূল করা; এখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, “এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে যা কিছু করার প্রয়োজন, আমরা তা করব এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালোভাবে সমন্বয় করছি।” তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। নেতানিয়াহু আরো বলেন, ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মাধ্যমে যে ‘অস্তিত্ববাদী হুমকি’ সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিহত করাই উদ্দেশ্য।
ইরান থেকে ৬ শতাধিক বিদেশি আজারবাইজানে চলে গেছে
ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর শত শত বিদেশি নাগরিক পাশ্ববর্তী দেশ আজারবাইজানে পাড়ি দিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা শুরুর পর থেকে ১৭টি দেশের ৬০০-এর বেশি নাগরিককে ইরান থেকে আজারবাইজান হয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
ইরান থেকে ছয় শতাধিকা বিদেশি নাগরিক কাস্পিয়ান সাগর উপকূলের আস্তারা সীমান্ত চেকপোস্ট পার হয়ে আজারবাইজানে প্রবেশ করেছে। আলজাজিরা লিখেছে, এই নাগরিকরা কাস্পিয়ান সাগর উপকূলের আস্তারা সীমান্ত চেকপোস্ট পার হয়ে আজারবাইজানে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে তাদের বাকু বিমানবন্দরে পাঠানো হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই তৎপরতায় রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, সার্বিয়া, রোমানিয়া, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা রয়েছেন।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা কাতারের
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দোহায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের এই হামলা একটি অপরিকল্পিত পদক্ষেপ, যার খুব ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। কাতার এই হামলাকে তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছে।”
আল-আনসারি বলেন, এমন এক সময়ে এই হামলা হয়েছে যখন ইরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি ইতিবাচক কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল, যেখানে অনেক আঞ্চলিক দেশও সংশ্লিষ্ট ছিল।
তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যস্থতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কাতার এবং ‘মনে করে যে, একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আমেরিকার আগ্রহ রয়েছে।”“আমরা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব,” যোগ করেন তিনি।
সাইবার হামলায় ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কার্যক্রম ‘বিঘ্নিত’
ইরানের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সেপাহ ব্যাংক, যেটি সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ফলে ব্যাংকটির অনলাইন সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। পার্স টুডে লিখেছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আশা করছে তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল-সম্পর্কিত হ্যাকিং গ্রুপ প্রিডেটরি স্পারো। তারা দাবি করেছে, এই হামলার মাধ্যমে তারা ব্যাংকের তথ্য ধ্বংস করে দিয়েছে। এই হামলাটি এমন সময় করা হলো, যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাত চূড়ান্ত উত্তেজনায় এবং উভয়পক্ষই সামরিক ও ডিজিটাল অঙ্গনে একে অপরকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আরো শক্তিশালী’ আক্রমণের ঘোষণা ইরানের
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর জানিয়েছে, সম্প্রতি ইসরায়েলের দিকে ‘আরো শক্তিশালী’ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপরে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএর বরাতে দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
সেনাবাহিনীর স্থল বাহিনীর কমান্ডার কিওমারস হেইদারি বলেছেন, “নতুন এবং উন্নত অস্ত্রসহ সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর স্থল বাহিনী কর্তৃক ভয়াবহ আক্রমণের একটি নতুন ধারা শুরু করা হয়েছে। যা আগামী কয়েক ঘণ্টায় তীব্রতর হবে।”
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াই নেট নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলের তেল আবিব, জেরুজালেমসহ অন্তত ৪টি অঞ্চলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে বেশ কয়েকটি এলাকায় বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আগুনে ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র: চীন
ইরান-ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনাকে যুক্তরাষ্ট্র আরো উস্কে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, সংঘাতকে প্রশমিত না করে উল্টো উস্কে দেওয়া মানে ‘আগুনে ঘি ঢালা’র মতো অবস্থা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানিদের অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর বেইজিং এমন মন্তব্য করলো।
মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। এ সময় ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আগুনে ঘি ঢালা, হুমকি দেওয়া ও চাপ সৃষ্টি করা পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য করবে না, বরং সংঘাতকে আরো তীব্র ও বিস্তৃত করবে।”
ইরানের ইসফাহানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকালে ইসফাহানের মধ্য প্রদেশের কাশান শহরের একটি চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি প্রজেক্টাইল আঘাত হেনেছে। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং আরো চারজন আহত হয়েছেন।
সংবদ সংস্থাটি ইসফাহানের গভর্নরের ডেপুটি সিকিউরিটি অফিসার আকবর সালেহির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার। ইরানের তাসনিমসহ অন্যান্য সংবাদ সংস্থাগুলোও হতাহতের এই খবর জানিয়েছে, তবে আরো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গল সকালে তেহরানে হামলা চালিয়ে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর প্রধান আলী শাদমানিকে হত্যার দাবি করেছে। তবে এ বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শাদমানিকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাত্র কয়েকদিন আগেই। এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েল একই ইউনিটের সাবেক প্রধান গোলাম আলি রাশিদকে হত্যার দাবি করেছিল। গত শুক্রবার ভোর থেকে ইরানে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অনেক উচ্চপদস্থ ইরানি সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং শিশু ও নারীসহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
তাসনিম নিউজ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর শহীদদের মধ্যে রয়েছেন- সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি, আইআরজিসির কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি, আইআরজিসির মহাকাশ বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ, আইআরজিসির সিনিয়র কমান্ডার জেনারেল গোলাম আলী রশিদ এবং আইআরজিসির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি।
ইরানের আইআরজিসির শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
আজ মঙ্গলবার তেহরানে হামলা চালিয়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর প্রধান আলী শাদমানিকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আলী শাদমানিকে ইরানের ‘সবচেয়ে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার’ এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসরায়েল। তবে এ বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শাদমানিকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাত্র কয়েকদিন আগেই। এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল একই ইউনিটের সাবেক প্রধান গোলাম আলি রাশিদকে হত্যার দাবি করেছিল।
ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব-জেরুজালেমে বিস্ফোরণ
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কিছুক্ষণ আগে আবারো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়াই নেট নিউজ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মধ্য ইসরায়েলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিবের উত্তরে উপকূলীয় শহর হার্জলিয়াতে একটি আট তলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, জেরুজালেম এলাকায় একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, দেশজুড়ে সাইরেন বাজানো হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের ৩০টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এই খবর এলো। এর আগে রাতভরও ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। আলজাজিরা জানিয়েছে, সোমবার রাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কারণে ইসরায়েলিরা প্রায় সারা রাত আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকে ছিল। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধবিরতির জন্য ফিরিনি, বড় কিছুর জন্য অপেক্ষায় থাকুন: ট্রাম্প
ইসরায়েল-ইরানের সংঘাত থামাতে আগেভাগেই জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানান, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “ফ্রান্সের ‘প্রচারপ্রিয়’ প্রেসিডেন্ট ভুলভাবে বলেছেন, আমি কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে ওয়াশিংটনে ফিরে যাচ্ছি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ‘যুদ্ধবিরতি’ নিয়ে কাজ করার জন্য। এটা ভুল!” ফিরে আসার কারণ “তার চেয়ে অনেক বড় কিছু” এবং বলেন, “অপেক্ষায় থাকুন!”
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর আরো বড় কিছুর জন্য অপেক্ষার কথা জানালেন তিনি।
ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ
জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস আজও বন্ধ থাকবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূতাবাসের সব কর্মী ও তাদের পরিবারকে তাদের বাসস্থানের ভেতরে বা কাছাকাছি স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। খবর আল জাজিরার। ইসরায়েলে অবস্থিত মার্কিন মিশন জানিয়েছে, জেরুজালেমের পাশাপাশি তেল আবিবে অবস্থিত তাদের শাখাও বন্ধ থাকবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “মার্কিন দূতাবাস এই মুহূর্তে আমেরিকানদের সরিয়ে নেওয়ার বা সরাসরি ইসরায়েল ত্যাগে সহায়তা করার অবস্থানে নেই।” এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানিয়েছিলেন, তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ভবনের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবনের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, মার্কিন কর্মীদের কোনো আঘাত লাগেনি এবং জেরুজালেম ও তেল আবিবে দেশটির দূতাবাস ও কনস্যুলেট এদিন বন্ধ থাকবে।
ইরান গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ সোমবার রাতভর জেরুজালেম, তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে তেহরান। ইরানের সর্বশেষ হামলায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না: যৌথ বিবৃতিতে জি৭
কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক জোট জি৭ একটি যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতে ‘উত্তেজনা কমানোর’ আহ্বান জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
কানাডায় ৫১তম শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বৈঠকে থাকা জি-৭ দেশগুলো তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আরো বলা হয়েছে, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না’। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা নিশ্চিত করছি, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে স্পষ্ট করে বলেছি, ইরান কখনই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না।”
“আমরা জোর দিয়ে বলছি যে, ইরানি সংকটের সমাধানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে শত্রুতা হ্রাস পাবে, যার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতিও অন্তর্ভুক্ত।” মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প তার মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা উচিত ছিল। আমি তাদের চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম। এটা লজ্জার, আর মানব জীবনের ক্ষতি। সাধারণভাবে বলছি: ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। আমি এটি বারবার বলেছি। সবাই জরুরিভিত্তিতে তেহরান খালি করে দিন।”
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প: মাখোঁ
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মাখোঁ সাংবাদিকদের জানান, “এই প্রস্তাবটি আলোচনা শুরু করার জন্য।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফরাসি ভাষায় বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাত থামাতে সক্ষম হয়, তা খুবই ভালো বিষয় এবং ফ্রান্স তা সমর্থন করবে এবং আমরা এ জন্য শুভকামনা জানাই।” তিনি আরো বলেন, “উভয় পক্ষেরই হামলা বন্ধ করা উচিত, বিশেষ করে নিরীহ জনসংখ্যার ওপর সমস্ত হামলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি।” এ ধরনের কোনো হামলা কখনোই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইরান আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটা দুঃখজনক ও অনর্থক প্রাণহানি। পরিষ্কার করে বলছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করতে পারে না। আমি বারবার এটা বলেছি!”
তেহরান খালি করার ট্রাম্পের আহ্বান ‘ভয়ঙ্কর ও উদ্বেগজনক’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘তেহরান খালি করার’ আহ্বানকে “ভয়াবহ ও চরমভাবে উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্ক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’-এর নির্বাহী সহসভাপতি ম্যাথিউ ডাস।
তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা আসলে ভয়াবহ। তেহরান একটি মহানগরী যেখানে ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। এই বিশাল জনসংখ্যাকে হঠাৎ করে সরিয়ে নেওয়া এক কথায় অসম্ভব। তেলের সংকটের মধ্যে মানুষকে পায়ে হেঁটে পালাতে হবে- এটা এক ভয়ঙ্কর কল্পনা।”
দুর্ভাগ্যবশত, ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলছেন তা কতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত তা জানা কঠিন… তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রপতির এই ধরণের ভাষা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের সকলের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত,” তিনি বলেন।
ডাস আরো বলেন, “ট্রাম্প যা বলেন, তার কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেটা বোঝা কঠিন হলেও, এমন ভাষা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শোনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমাদের সবার সতর্ক হওয়া উচিত।” এর আগে ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে বলেন, “সবাই এখনই তেহরান ছেড়ে চলে যাও!”
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্প কেন এমন বিবৃতি দিলেন সেটি স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য হলো ইরানি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেকোনো চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা, তার মনে যে চুক্তিই থাকুক না কেন।
‘ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে আছে’
ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফোরদো’-তে হামলা চালানোর ক্ষমতা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেরজোগ। তার এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি।
এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে হেরজোগ বলেন, “ফোরদো একটি গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা। যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই কেবল এমন বোমা আছে যা সেখানে আঘাত হানতে পারে।” তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিরোধে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।” ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ইরানের একটি পাহাড়ি অঞ্চলে গভীরভাবে ভূগর্ভে অবস্থিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মন্তব্য ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হতে পারে।
এদিকে, ইরান এখনো বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
Share this content: