এ বি এন এ : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, শনিবার ভোরে ও আগের রাতে এই ঝড়ে দেয়াল ধস, গাছ চাপা ও জোয়ারের পানিতে ডুবে চট্টগ্রামে নয়, নোয়াখালীতে তিন, ভোলায় তিনজন, কক্সবাজারে দুই, পটুয়াখালীতে এক এবং লক্ষ্মীপুরে একজন প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ শনিবার বেলা দেড়টায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম উপকূলের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ডু ও ফেনী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে এসেছে।’
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খবর
চট্টগ্রাম অফিস
ঘূর্ণিঝড়ের সময় ষোলশহরে এক পথশিশু ও সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাসার ছাদ থেকে আসা ইঁটের আঘাতে রাকিব (১১) নামে ওই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কতব্যর্রত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে ভোরে উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ি এলাকা কালাপানিয়া লোকমানের ঘোনা এলাকায় ঘড়ের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে মা-ছেলের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- স্থানীয় মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী কাজল বেগম (৪৮) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বাবু (১০)। সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘গাছ ভেঙে পড়লে ঘরের খুঁটি ভেঙে যায়। এতে ঘরের মধ্যেই চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়।’
হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ডুবে নারী-শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, জাহাজমারা ইউনিয়নের মাহফুজা বেগম (৫১) এবং চানন্দী ইউনিয়নে মিনারা বেগম (৪০) ও রুমা বেগম (৯)। হাতিয়া থানার ওসি আরিছুল হক এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)। এদিকে দৌলতখান উপজেলারে জয়নগর গ্রামে ঘর চাপা পড়ে রেনু বিবি (৩৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুর ১২টার দিতে তিনি মারা যান।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কুতুবদিয়া উপজেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জন। শনিবার বেলা তিনটার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এরা হলেন, উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)। ইকবাল দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল নৌকার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে নয়া বিবির (৫২) মৃত্যু হয়। ঝড়ে ওই এলাকার ১০-১২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। শনিবার উপজেলার উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে।
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান:এই উপজেলায় ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে। কানকানাবাদ ইউনিয়নের প্রাইমাশিয়া গ্রামে আবু সিদ্দিক (৫০), বুলু আক্তার (৫০) ও জালালউদ্দিনসহ (৫৬) দুই শিশুর প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার অন্য একটি ইউনিয়নে একজনের মৃত্যু হয়েছে।