এবিএনএ : কঠোর রোদের প্রখরতা উপেক্ষা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। হত্যার পঞ্চমদিন বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আবারো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আধাঘণ্টা ব্যাপী তারা ওই সড়কে অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে একটি সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। এ সময় ওই মিছিলে যোগ দেন বিভিন্ন বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হতে থাকে। মিছিলে তারা ‘জাগো জাগো, মানুষ জাগো’, ‘আমার শিক্ষক মাটিতে কেন, প্রশাসন বিচার চাই’, ‘পিতার গায়ে রক্ত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘সন্ত্রাস-হামলা যেখানে, লড়াই করবো সেখানে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের মুখে এখন উচ্চারিত হচ্ছে- ‘স্টপ জেনোসাইট’।
পরে অবস্থান কর্মসূচি থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আবারো বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে আবারো মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনদিন ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার থেকে সবাইকে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কিন্তু শিক্ষকদের সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস বর্জন করে আবারো রাস্তায় নেমে আসে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে বেলা সোয়া ১১টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে মানববন্ধন করে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে গিয়ে শিক্ষক হত্যার বিচার দাবিতে ইংরেজী বিভাগের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। এছাড়াও একই সময়ে বিক্ষোভ মিছিল করে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাগুরা জেলা সমিতি।
তবে শিক্ষক হত্যার দিন তাত্ক্ষণিক রাবি শাখা ছাত্রলীগ নামেমাত্র একটি মিছিল করে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে আসছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরম সমালোচনার সম্মুখিন হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক রকম বাধ্য হয়েই মাত্র দেড় শতাধিক নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
চারুকলার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার প্রতিবাদে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমী কর্মসূচি গ্রহণ করে। হামলাকারীরা শিক্ষক রেজাউল করিমকে যেভাবে ফেলে রাখে সেভাবে তারা প্রতিকী উস্থাপন করে। এ সময় তারা গণহত্যার প্রতিকীও উপস্থাপন করে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাসার কাছে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে হত্যার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।