এবিএনএ : রক্তের বন্ধনে না হলেও হৃদয়ের বন্ধনের গভীরে গ্রোথিত আমার প্রিয় মামা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা উত্তর ও পূর্ব বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি /বাগেরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সরদার আব্দুল জলিল আর নেই, সংবাদটি শুনে আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি।করোনা তান্ডবের এ দূর্যোগের মধ্যে মৃত্যু সংবাদটি যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। কোন কিছুই ভালো লাগছে না আমার।
মনে পড়ে মামার সাথের অনেক স্মৃতিময় কথা। আমি যখন ১৯৮৯ সালে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হই মামা ঢাকায় আসলে আমার সাথে না দেখা করে যেতেন না। আমি তখন ছাত্রলীগের একজন নিয়মিত কর্মী, থাকি সূর্যসেন হলে।মামাকে দেখতাম রাজনৈতিক কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করতে তখনকার জেলা আওয়ামী লীগের Secretery আমার আর এক প্রিয় মামা Advocate ফকির মনসুর আলীর নেতৃত্বে, লতিপ খন্দকারসহ বারকাউন্সিলের গেস্টহাউজে উঠতেন। আমাকে খবর দিলে দৌড়ে বার কাউন্সিলে যেতাম। আমাকে পেয়ে কি যে পরম মায়ায় জড়িয়ে ধরতেন তা ভুলবার নয়। আমাকে নিয়ে মামারা তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৯ মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে যেতেন। নেত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য ঘন্টাকে ঘন্টা কত রাত যে মিন্টু রোডের বাসার মেঘনী তলায় দাড়িয়ে রয়েছি তা এখনো স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।মনে পড়ে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে হল গুলো vacant হতো তখন বাগেরহাটে চলে যেতাম।জলিল মামা বরাবর আমাদের বাসার সামনে দিয়ে কোর্টে যেতেন, বাগেরহাটে গেছি খবর পেয়ে আমাদের বাসায় ঢুকে ও বু ও রোকা বু (আমার মার নাম) খোকন আইছে বলে চিৎকার করে করে আমার মা কে ডাকতেন।আমাকে দেখে “হারামজাদা” বাগেরহাটে আইছিস্ আমাকে খবর দিসনি কেন? পরম মায়ায় আমাকে জরিয়ে ধরতেন। হারামজাদা বলার এই প্রিয় মানুষটি আজ আর পৃথিবীতে নেই ভাবতে অবাক লাগছে।
মনে পড়ে ৯৬সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তখনকার বাগেরহাটের কর্তা মন্ত্রীর মিন্টো রোডের বাড়ীতে ও মন্ত্রানালয়ে ফকির মনসুর মামার সাথে আমাকে নিয়ে বহুবার দেখা করে বাগেরহাট আদালতের P P ( public prosecutor) হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন।কর্তা বাবু মন্ত্রী বাহাদুরের মনোজয় করতে না পেরে মামার অভিলাশটি পূরন হয়নি, শেষজীবনে অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন।একবার মামা উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছিলেন সেটিও অপূর্ন রয়ে গেছে তার জীবনে। প্রায় দেখতাম একজন সিনিয়র আইনজীবি হিসাবে বাগেরহাট বারের সভাপতি হওয়ার দারুন ইচ্ছায় দলীয় নমিনেশন পাওয়ার তদবীর যুদ্ধে দৌড় ঝাপ করতেন কিন্তু বাস্তবে দেখতাম জুনিয়ররা ছলা কলা, কৌশলে তাকে পিছনে ফেলে দলীয় নমিনেশন ভাগিয়ে নিতেন।অনেক কষ্টে একবার দলীয় নমিনেশন সংগ্রহ করলেও রাজনৈতিক ছলা কলা, কূট কৌশল ও ভোটের রাজনীতির নিকট নতি স্বীকার করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।কি লজ্জ্বা আমাদের? জলিল মামার দুই সন্তান সুমন ও সুজন দীর্ঘদিন আমেরিকাতে থাকে। বছর দুয়েক আগে যখন আমি আমেরিকাতে গিয়েছিলাম মামা জানতে পেরে তার সন্তানদেরকে বলেছিলেন আমার খোঁজ নিতে।হঠাৎ দেখি মামার ছোট ছেলে সুজন গাড়ি নিয়ে আমার ম্যানহাটনের গেস্টহাউজে এসে উপস্থিত, আমাকে নিয়ে statue of liberty তে গিয়েছিলো।আলাপ চারিতায় আমেরিকা আসার ইতিহাস জানতে পারলাম, একজন সাংবাদিক হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বধান্যতায় তার সফর সঙ্গী হিসাবে আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।সর্বশেষে এ অতৃপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আত্মা, আমার প্রিয় মামা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সরদার আব্দুল জলিল গতকাল এই নশ্বর পৃথিবীর সকল মায়া, বন্ধন ছিন্ন করে চিরকালের জন্য পর -পারে পাড়ি জমিয়েছেন একবুক কষ্ট, ব্যথা ও বেদনা নিয়ে। তোমাকে আমরা তৃপ্ত করতে পারিনি সদা হাস্যোজ্বল, হে বীর মুক্তিযোদ্ধা, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও।উপরে নিশ্চয়ই ভালো থাকবে তুমি। সর্বশক্তিমানের কাছে এ বিনীত প্রার্থনা আমার। তোমার জানাজায় অংশ গ্রহন করতে পারিনি এ অধমকে ক্ষমা করো তুমি। এ যন্ত্রনা থাকবে আমৃত্যু, আমার এ ছোট্ট জীবনে।
ইতি তোমার ভাগনে। লেখক, শেখ আলী আহম্মেদ খোকন, আইনজীবি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
Share this content: