এবিএনএ : বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়েছেন। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বো, নয় মরবো’ এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। শনিবার বিকালে রাজধানীতে আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই শপথ নেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পরে সোহরাওয়ার্দীর সামনে দীপ্ত শপথ নেন আওয়ামী লীগের হাজার নেতাকর্মী। এই শপথ নিয়ে নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা করেন।
শোভাযাত্রার আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেইটের সামনে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে শোভাযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যাব। সমস্ত অপশক্তি, অগণতান্ত্রিক চক্রান্ত সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব-এই হোক আজ আমাদের শপথ।’ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজকের বিজয় সমাবেশ থেকে সবাইকে শপথ নিতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বো।’
বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি জানিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আজকে শপথ নিতে হবে সোনার বাংলা গড়ে তোলার।’ আরেকটি পঁচাত্তর ঘটানোর মতো পৃথিবীতে কোনো অপশক্তি নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি মানচিত্র দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একাত্তর সালে পাকিস্তান ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যেমন আমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত করেছিল। ঠিক একইভাবে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তান ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। আমাদের শপথ নিচ্ছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাবো।’
অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘শপথ নিতে হবে সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। সব অপশক্তির চূড়ান্ত পরাজয় ঘটাবো।’
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেনার বাংলা গড়ে তুলতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মরবো-এই শপথ নিতে হবে।’
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তির সংগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব-এই হোক আজকের শপথ।’
শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নান, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বেলা ৩টা ৪০ মিনিট থেকে শোভাযাত্রা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট থেকে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে যাত্রা করে। কেন্দ্রীয় নেতারা এতে নেতৃত্ব দেন। সোয়া পাঁচটার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।
বিজয় শোভাযাত্রাকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে শনিবার দুপুর ১২টার পর থেকে মিছিল নিয়ে সোহারাওয়ার্দী উদ্যানের আসেন আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা নানা সাজে গায়ে ও মাথায় জাতীয় পতাকা জড়িয়ে মিছিলে অংশ নেন। বাদক দল, ঘোড়ার গাড়ি, পিকআপ ভ্যানে নানা সাজ ধারণ করে শোভাযাত্রায় যোগ দেন সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শোভাযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জয় বাংলা স্লোগানে মুখর ছিল শেভাযাত্রা।