এবিএনএ : যুক্তরাজ্যের যে পাঁচটি পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে আজ মঙ্গলবার নির্বাচন হবে, এর প্রতিটিতে জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। জনমতের এই পূর্বাভাস যদি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে হিলারি তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের নাগালের বাইরে চলে যাবেন।
একই রকম চমৎকার ফল দেখাতে পারলে ট্রাম্প হয়তো তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারবেন না। কিন্তু পেছন দরজা দিয়ে তাঁকে টপকে কেউ মনোনয়ন ছিনিয়ে নেবে, এ সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে আসবে।
বার্নি স্যান্ডার্সের নির্বাচনী অভিযান যুক্তরাষ্ট্রে শহুরে শ্বেতকায় ও শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে জাগরণ এনেছে। কিন্তু নির্বাচনী সাফল্যে পরিণত হয়নি। প্রধান কারণ, আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক অভিবাসীরা তাঁকে কম সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে, এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ও পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর সমর্থনের জোরে হিলারি প্রধান রাজ্যগুলোতে বড় জয় পেয়েছেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ নিউইয়র্ক। এখানে তিনি স্যান্ডার্সকে ১৬ পয়েন্টে ধরাশায়ী করেন।
পাঁচটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে আজ প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর প্রতিটিতেই রয়েছে উল্লেখযোগ্য আফ্রিকান-আমেরিকান জনসংখ্যা। এক রোড আইল্যান্ড ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যেই হিলারি এগিয়ে। কোনো কোনোটিতে স্যান্ডার্সের সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ বা তার চেয়েও বেশি পয়েন্ট।
রিপাবলিকান পক্ষেও জনসংখ্যাগত তারতম্য ট্রাম্পের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। অতি রক্ষণশীল ক্রুজ ইভাঞ্জেলিক্যাল সমর্থনবলয়ের বাইরে ট্রাম্প মোটেই জনপ্রিয় নন। তৃতীয় প্রার্থী গভর্নর কেইসিক তাঁর নিজের রাজ্য ওহাইও ছাড়া কোথাও উল্লেখযোগ্য সমর্থন দেখাতে পারেননি। কিন্তু ট্রাম্প সব ধরনের রাজ্যেই চমৎকার সাফল্য অর্জন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁপরে ফেলেছেন। বিশেষত, নগরপ্রধান ও কম রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজকে সহজেই পরাস্ত করেছেন।
জনমত জরিপ অনুযায়ী, নির্বাচনে ট্রাম্প তাঁর অবশিষ্ট দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২০ পয়েন্ট (পেনসিলভানিয়া) থেকে ৩৭ পয়েন্টে (রোড আইল্যান্ড) এগিয়ে। যদি পাঁচ রাজ্যেই ট্রাম্প প্রত্যাশা অনুসারে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, ডেলিগেট গণনায় তিনি তাঁর নির্ধারিত লক্ষ্য, অর্থাৎ ১ হাজার ২৩৭-এর কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন।
এদিকে ট্রাম্পকে ঠেকানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে—এমন দুশ্চিন্তা থেকে টেড ক্রুজ ও গভর্নর জন কেইসিক অলিখিত সন্ধিতে পৌঁছেছেন। তাঁরা ঠিক করেছেন, নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির ফলে ট্রাম্প যাতে ফায়দা না নিতে পারেন, সে জন্য তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন না। যে রাজ্যে জরিপে কেইসিক এগিয়ে, সেখানে ক্রুজ অনুপস্থিত থাকবেন। যেখানে ক্রুজ এগিয়ে, সেখানে কেইসিক অনুপস্থিত থাকবেন।
ট্রাম্প অবশ্য তাঁদের এই সন্ধিকে এক কথায় বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁর মতে, এই ‘দুর্বল’ ও ‘করুণাজনক’ ফর্মুলায় তাঁর জয় ঠেকানো যাবে না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারের এক বার্তায় তিনি ক্রুজকে আবারও ‘মিথ্যাবাদী’ ও কেইসিককে ‘৩৮-এ ১’ বলে পরিহাস করেছেন। এ পর্যন্ত ৩৮টি বাছাইপর্বের নির্বাচনে কেইসিক শুধু একটি রাজ্যে জয়লাভ করেছেন।
নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা বলছেন, আজকের নির্বাচনের পর ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা আসবে আগামী ৩ মে ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনে। এক সপ্তাহ আগেও এই রাজ্যে ক্রুজ এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্প তাঁকে ৬ পয়েন্টে ছাড়িয়ে গেছেন। এখানে রয়েছেন ৫৭ জন ডেলিগেট, যার বেশির ভাগই যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন, তাঁর বাক্সে যাবে।
ইন্ডিয়ানায় ট্রাম্প জিতলে তাঁকে আটকানো অসাধ্য হবে। এমনকি এর পরের কয়েকটি ছোট ছোট পশ্চিমা রাজ্যে ক্রুজ বা কেইসিক ভালো ফল করলেও ট্রাম্পকে আটকানো কঠিন। বাছাই মৌসুমের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ক্যালিফোর্নিয়া। এখানে তাঁদের জন্য ১৭২ ডেলিগেট অপেক্ষা করছে। এই রাজ্যে ক্রুজ ও কেইসিকের চেয়ে ৩০ বা তার চেয়ে বেশি পয়েন্টে এগিয়ে ট্রাম্প।