এ বি এন এ : বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ‘বেছে বেছে হত্যার’ এই পথ নিয়েছে তারা।
টোকিওর ইমপেরিয়াল হোটেলের হল রুমে রবিবার দুপুরে জাপান প্রবাসীদের আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপির কাজ পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা। মনে হলো যেন, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার মহোৎসব শুরু হয়েছে। এটিই নাকি তাদের আন্দোলন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করাটা তাদের কাজ। তবে জনগণ বিএনপির ওই আন্দোলনে সমর্থন দেয়নি। বরং জনগণ তাদের প্রতিহত করেছে। তাই বিএনপি নেত্রী রণে ভঙ্গ দিয়ে কোর্টে হাজিরা দিলেন এবং বাসায়ও ফিরে গেলেন।
ওই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ‘বেছে বেছে মানুষ হত্যা’ শুরু করেছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিরীহ মানুষ, মন্দির ও গির্জার পুরহিত, ফাদার, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করল; যেন বিদেশে সেনসেশন তৈরি হয়। প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বাংলাদেশকে।’
গত মাসে কলাবাগানে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণির আপন খালাতো ভাই (জুলহাজ) ও তার বন্ধুকে ঘরে ঢুকে হত্যা করল। সে আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে কাজ করত, পরে ইউএসআইডিতে ছিল। তারা তো আমাদের মতাদর্শেরই। তাদের হত্যা করা হল। কারণ এটা নিয়ে আমেরিকা যেন প্রশ্ন করে।
উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুপ্তহত্যা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, লক্ষ্য একটাই- দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা সৃষ্টি করা। আগে প্রকাশ্যে শুরু করেছে। এখন গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। তবে যতো বাধাই আসুক না কেন যুদ্ধাপরাধের বিচার হবেই।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজকে জাতির আকাঙ্ক্ষা। আজকে বাংলাদেশের মানুষ অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের দুই মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী দুইজনকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। তাদের দুজনেরই যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিচার হয়েছে। ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাজেট তিন গুণ বৃদ্ধি করেছি। সামনের বাজেট আরও বড় বাজেট আসছে। সেটা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ করেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৬৪৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে ২ হাজার ডলারের কোটা ছাড়িয়ে যাবে।
রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেহেতু বেড়েছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাড়ছে। ৫ শতাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যদিও আমরা ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি, কিন্তু আমি সব সময় বলি, আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা নিম্নে থাকতে পারি না। আমরা ঊর্ধ্বে উঠবোই এবং সেটাই হবে আমাদের লক্ষ্য।
প্রবাসীদের প্রতি দেশ নিয়ে হতাশা নয়, আশাবাদের কথা বলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশ শুনলে অনেকে নাক সিঁটকাত, অসম্মানের চোখে দেখত। বাংলাদেশের কিন্তু সেই অবস্থান এখন আর নেই। এই সম্মানটা ধরে রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের প্রবাসীদের ওপর বর্তায়।
জাপানের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাপানের সঙ্গে মিলিয়ে আমি আমাদের অবকাঠামো দেখছিলাম। উন্নত দেশ জাপান, তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা সাজে না। আমাদের দেশকে কবে এমন উন্নত করব সেই স্বপ্ন দেখতেতো কোনো অসুবিধা নাই। এরইমধ্যে যে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে তাতে ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে গেছে।
ব্যাপক আকারে যাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসে সেজন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা করব, যাতে দেশি-বিদেশি সবাই বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ বিনিয়োগ ছাড়া উন্নয়ন হবে না, সেটা আমি বিশ্বাস করি। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং বিভিন্ন রকম অবকাঠামো নির্মাণ আমরা করে যাচ্ছি। সেখানে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আমরা দিচ্ছি। জাপানকে বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রামে ৫০০ একর জায়গা দেয়া হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আখতারুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।