এ বি এন এ : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে হুইসেল বাজানো প্রহরীর দায়িত্বও পালন করতে পারেনি। বরং যারা নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের সহায়তা করে এসেছে। লাজ-লজ্জাহীন এক উদ্ভট প্রাণিতে পরিণত হয়েছে কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রাণহানিতে তাদের বিকার নেই, শাসক দলের ক্যাডারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনে কমিশন নিশ্চুপ।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির পক্ষে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিগত তিন দফার মতো চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী ভোট ডাকাতির মহোৎসব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।’
দলটি বলছে, চতুর্থ ধাপে দেশব্যাপী ৪৭টি জেলার ৭০৯টি ইউপিতে ভোটকেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের লাইন ধরে নৌকা প্রতীকে সীলমারা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই এবং ব্যাপক জাল ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থিদের ফলাফল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অথচ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ৯০ শতাংশ ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থিরা বিজয়ী হতো।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, গাজীপুর, রাজশাহীর বাগমারা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ফরিদপুরের সদরপুর, রাজবাড়ির পাংশা, ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা, ঝিনাইদহ সদর, শরীয়তপুরের নড়িয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার মনোহরগঞ্জ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা, ঝিনাইদহ সদর, মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলা, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা, কুমিল্লার চান্দিনা, কুষ্টিয়া সদর থানা, নাটোরের নলডাঙ্গা, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা, গাইবান্ধা সদর, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা এবং পাবনার আটগড়িয়া ও সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কারচুপি ও ভোট ডাকাতিসহ নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আগের তিন ধাপের মতো চতুর্থ দফার নির্বাচনেও বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা, অস্ত্রের মহড়া, হামলা ও নিরুপায় হয়ে প্রার্থীদের ভোট বর্জনের চিত্র ছিল একই। পূর্বের ন্যায় এবারও ভোটের দিন সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক কেন্দ্রে ভোট শুরু হয়ে যায় আগের রাতেই।
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে নরসিংদীর রায়পুরাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে একজন নিহত হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত ৭১ জন লোক মারা গেছে।
রিজভী আরো বলেন, মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধাদান, মনোনয়নপত্র কেড়ে নেয়া কিংবা ছিঁড়ে ফেলার কারণে বিএনপি প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে অভিযোগ করলে অবলা প্রাণির ন্যায় আচরণ করেছে কমিশন। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিএনপির কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেও ক্ষমতাসীনদের চাপ সৃষ্টির কারণে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততার কারণেই এটি হয়েছে। এ কারণে চতুর্থ ধাপের এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১০৯টি ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীশূন্য থাকছে। এর জন্য দায়ী অথর্ব নির্বাচন কমিশন।
ইসির সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ নির্বাচন হলেও সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে হত্যা করেছে এই কমিশন। গণতন্ত্র হত্যার জল্লাদ হিসেবে এদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। মানুষের ভোটাধিকার দুর্বিনীত শাসক দলের অনুকূলে হরণ করতে সহায়তা করার জন্য এই কমিশনের পদাধিকারীরা দেশবাসীর কাছে দুষ্কৃতিকারী হিসেবেই গণ্য হবেন।