এ বি এন এ : ইতিহাসের পিছে হিলারি নন, হিলারির পিছে ছুটেছে ইতিহাস। তিনি যতই এগিয়ে যাচ্ছেন, ইতিহাস তাকে দিচ্ছে নতুন নতুন খেতাব, মর্যাদার নব নব আসন। আরো যত ধাপ পাড়ি দেবেন, প্রত্যেক ধাপে ইতিহাসে হয়ে থাকবেন তিনি।
বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি কথা মনে পড়ছে। তার স্মরণীয় উক্তিগুলোর মধ্যে একটি- ‘আপনি যখন একটি পাহাড়ের চূড়ায় উঠবেন, তখন মনে হবে এ রকম আরো পাহাড় আছে, যেগুলোয় উঠতে হবে।’ হিলারির বেলায় এ কথা যুতসই বটে। একটি বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে, তার সামনে পড়েছে নতুন পাহাড়। বাধার পাহাড়গুলো তিনি ডিঙিয়ে যাচ্ছেন, আর ইতিহাস ছুটছে তার পিছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ইন্ডিপেনডেন্স হলের মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশন। এই ইন্ডিপেনডেন্স হলেই জন্ম হয় যুক্তরাষ্ট্রের। এখান থেকে ঘোষিত হয় গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা। এখানেই গৃহীত হয় তাদের সংবিধান। ঐতিহাসিক এ স্থানের পাশেই ডেমোক্রেটিক পার্টি হিলারিকে তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে গেলেন ইতিহাস। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, আবারো হবেন ইতিহাস।
ইতিহাস যে সম্মান দিয়েছে হিলারিকে, তাতে তিনি নিজেও অভিভূত। মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে তার দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ উল্লেখ করা যাক। আপনারা আমাকে অন্তহীন সম্মান দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমরা দুই শতাব্দীর প্রাচীন বাধা ভেঙে ফেলেছি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জন্য তার এ অর্জনকে উৎসর্গ করে তিনি বলেন, এই গভীর রাতে যদি কোনো মেয়ে এ ঘটনা দেখার জন্য জেগে থাকে, তাহলে তাকে বলছি, আমি হতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এরপর হবে তোমাদের মধ্যে কেউ।
নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, নারী-পুরুষে সমতা- এ ধরনের অর্জনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নারীরা এতদিন যোগ্য বলে বিবেচিত হননি। খাতা-কলমে যতটাই বৈষম্যহীন, বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ততটাই নারীর প্রতি আস্থাহীন। নইলে ২২৭ বছর লাগত না, আগেই কোনো নারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে দেখাতে পারতেন। এখন পর্যন্ত হিলারিই প্রথম নারী, যিনি মার্কিন নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সম্মান অর্জন করলেন।
হিলারির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া কি অযৌক্তিক? আমার মতে না। হিলারিকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত, যেমন ইতিহাস দিচ্ছে এবং দেবে। হ্যাঁ, এ কথা সত্য, মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। হিলারিকে নিয়ে বিতর্ক আছে এবং তা ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো। কিছু ফাঁস হওয়া ইমেইল বার্তায় দেখা যাচ্ছে, হিলারিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে যে বিষয়টি বলতেই হবে, তা হলো- হিলারিকে ডেলিগেট সমর্থন নিয়েই বিজয়ীর হাসি হাসতে হয়েছে। সব বিতর্ক ছাপিয়ে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভারমন্টের সিনেটরও তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় হিলারিকে ‘উৎকৃষ্ট নেতা’ বলে ঘোষণা করেছেন স্যান্ডার্স। ফলে ইমেইল বার্তা নিয়ে জলঘোলা করে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
ইতিহাস তখনই হিলারিকে আরো উচ্চতায় নেবে, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তার পথে এখন একমাত্র বাধা ট্রাম্প। হিলারি ও ট্রাম্প দুজনেই নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। নিউ ইয়র্কের সিনেটর ছিলেন হিলারি। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী তিনি। ফার্স্ট লেডি, সিনেটর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর জন্য কাজ করেছেন তিনি। এবার জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চাইছেন হিলারি।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী নোম চমস্কি পর্যন্ত বলেছেন, ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি শতগুণ ভালো। এ ভালো মানুষটিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেলে, ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে বরণ করবে তাকে।