এবিএনএ : শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে একাত্ম হয়ে পুলিশ সেবাকে আরও জনবান্ধব করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যানধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে সেবার হাত প্রসারিত করতে হবে।
আজ সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭’-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি একটি চক্র বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোমলমতি যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সহিংস আক্রমণের মাধ্যমে মানুষ হত্যার মতো বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করছে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের উন্নয়নের প্রধান বাধা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় চারজন পুলিশ সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। নির্ভীক এই চার পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অসংখ্য প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।
জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি আশুলিয়ার আশকোনা এবং মিরপুরের কল্যাণপুরে পুলিশ জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করেছে। পুলিশ জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, প্রশিক্ষক ও আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, ‘শুধু দেশেই নয়, গত প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারির পরিচয় প্রদান করে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং প্যারেড কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান।
পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্যারেড কমান্ডার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারকে সঙ্গে করে একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চারটি ক্যাটাগরিতে ১৩২ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক বিতরণ করেন।
২০১৬ সালের মরণোত্তর পুলিশ পদক বিপিএম পান গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্য শহীদ রবিউল ইসলাম এবং শহীদ মো. সালাউদ্দিন খান। উভয়ের স্ত্রী এই মরণোত্তর পদক গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে নিহত পুলিশ কনস্টেবল শহীদ জহীরুল ইসলামের পক্ষে তাঁর স্ত্রী এবং পুলিশ কনস্টেবল শহীদ আনসারুল হকের পক্ষে তাঁর মা মরণোত্তর পুলিশ পদক গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও একাত্তরের বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত ‘রাজারবাগ-৭১’ নামের আবক্ষ মূর্তির নামফলক উন্মোচন করেন।