আমেরিকালিড নিউজ

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার

এবিএনএ : বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। মানসম্পন্ন শ্রম ব্যবস্থাপনা, নারী ও শিশুর জন্য শিক্ষার নিশ্চয়তাও জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন যে কোনো দেশের উন্নয়নের অপরিহার্য অংশ। শ্রম অধিকার এবং মানবাধিকার একে অন্যের পরিপূরক। খোদ আমেরিকায়ও এ অধিকারের নিশ্চয়তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক দিনব‌্যাপী সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্বের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বোস্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সূচনা হয় ‘বাংলাদেশে উদ্যোগ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন’ শীর্ষক সেমিনার। হার্ভার্ড ল স্কুল মিলনায়তনে সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান সেমিনারের সমন্বয়ক ইকবাল ইউসুফ। বোস্টনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (আইএসআইডি), সাসস্টেইনেবলিটি অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ ফর নেট পজিটিভ এন্টারপ্রাইজ (এসএইচআইএনই) এবং হার্ভার্ড এইচ এন স্কুল অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হার্ভার্ড ল স্কুলের লেবার অ্যান্ড ওয়ার্ক লাইফ প্রোগ্রাম এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের সামিট গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

শুক্রবার সকালের আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মারসেলো লাফ্লিউ’র, এমআইটি বিশেষজ্ঞ কাউল মারপি, বেইন ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্টের গোস্তাব পাপানেক, হার্ভার্ড স্কুল অ্যান্ড ল স্কুলের জন্স ট্রাম্পবউর, হার্ভার্ড ল স্কুল অব পলিটিক্যাল হেলথের আইলিন মেকানোলি প্রমুখ। সেমিনারে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, উপদেষ্টা মাসুদুর রহমানসহ সিনিয়র নেতা এবং প্রবাসী গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশিরা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হতে পারে। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার উৎসাহব্যঞ্জক। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। অধিকাংশ মানুষের দারিদ্র্য কমেছে। কৃষি ও শিল্পশ্রমিকদের অধিকার বেড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। উন্নয়ন সূচকের ধাপগুলো বাস্তবায়নে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, সমস্যা-সম্ভাবনার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে—এমন ব্যক্তিরা এ সেমিনারে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারের সমন্বয়কারী ইকবাল ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরছেন এ সেমিনারে। তিনি বলেন, কেবল সরকারই নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ের মাধ্যমেই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

এর আগে উদ্বোধনী সন্ধ্যায় সেমিনারের পৃষ্ঠপোষক এবং বক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ উন্নয়ন নিয়ে তাঁদের সংক্ষিপ্ত ধারণা এবং অভিমত উপস্থাপন করেন। হার্ভার্ড ল স্কুলের লেবার অ্যান্ড ওয়ার্ক লাইফ প্রোগ্রামের জন ট্রাম্পবউর বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী শ্রমধারণার পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তি এবং যন্ত্রের কাছে চিরচেনা শ্রমবাজার দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশসহ সব দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেমন সানচেজ বলেন, উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডই টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে। ম্যাসাচুসেটস রাজ্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ন্যাম পেম রাজ্য গভর্নরের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মুক্তচিন্তার অবাধ নিশ্চয়তা যেকোনো উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সেমিনারের অন্যতম ব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল হাসনাত, সানজা রহমান, আবু জালাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়নের প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নবিষয়ক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা টম লারস্ট্রেন এবং ডেভিড মেয়েলিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য সবার অংশগ্রহণ উন্মুক্ত রেখেছে। দ্রুত উন্নয়নশীল বিশ্ববাস্তবতায় আমাদেরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নানা দিকে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সাধিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অহংকারের সঙ্গে বলতে পারি, নানা অসুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অবস্থান সংহত করে লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ থেকে হার্ভার্ড সেমিনারে যোগ দেওয়া সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে দেখা যাবে, আমাদের অগ্রগতি ঘটেছে অনেক বেশি। বাংলাদেশের সামাজিক ও ভৌতিক অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটেছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ৭০ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে। ফাইবার অপটিক বসিয়ে হাইস্পিড ইন্টারনেট সুবিধায় এখন বাংলাদেশ। ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সক্ষম।’

প্রথম দিনের সূচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, আমেরিকান বাংলাদেশি সৈয়দ নুরুজ্জামান প্রমুখ।

হার্ভার্ড ল স্কুল মিলনায়তনে জড়ো হওয়া বিশেষজ্ঞরা পারস্পরিক মতবিনিময় করেন। এ সময় প্রথম আলোর কাছে দেওয়া বক্তব্যে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মর্যাদাপূর্ণ এ সেমিনারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়েই অগ্রসর ধারণা নেওয়া সম্ভব হবে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button